চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে! অধিকাংশ স্কুলেই অব্যবস্থাপনার কারণে দেখা দিয়েছে এমন সমস্যা। ১৮০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক আছে মাত্র ৬৭ টি বিদ্যালয়ে। ১১৩টি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এখন শূণ্যে ভাসার আশংকা রয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলায় ১৮০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১১৩ টি বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। ৬৭টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকলেও বাকীগুলো চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। এছাড়াও সহকারী শিক্ষকের পদ ১০২৩ টির বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৫০ টি এবং সহকারী শিক্ষা অফিসার পদ ৫ রয়েছে টি কিন্তু রয়েছে ৩জন। এদিকে দপ্তরী কাম প্রহরী নেই ৬৫ টি স্কুলে।
ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা অনেকেই দায়িত্ব পালন করছেন ধরি মাছ না ছুঁই পানি'র মতো। এ সমস্যার শিক্ষা ব্যবস্থার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। শুধু তাই নয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন অনেক সচেতন অভিভাবকরা। তারা তাদের শিশুদেরকে কিন্ডারগার্টেন ও শহরমুখী মুখী করছেন। ফলে অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই। সরকারি নিয়মে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সর্বনিম্ন ১৫২ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ স্কুলে তা নেই। কোন কোন স্কুলে ১শ'র কিছু কম বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। আবার কিছু কিছু স্কুল ১শ'রও কোন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বেতন কাঠামো একই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব ও কাজ বেশি হওয়ায় যোগ্য এবং অভিজ্ঞরা দায়িত্ব নিতে চান না। এই পদে বেশির ভাগই অসৎ চিন্তাশীলরা দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম পিছনে পড়ছে অনেক স্কুলে।
একাধিক অভিভাবক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আর পাঠদান যেভাবে চলছে, এতে করে শিশুদের মননশীলতা বৃদ্ধি পাবে না। তাছাড়া কিন্ডারগার্টেনের একটি শিশু যা পারে ওই সমান ক্লাসের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু তা পারে না। তাহলে সরকার এত টাকা কেন ব্যয় করবে একটি প্রাইমারি স্কুলে। তাছাড়া শিক্ষকদের আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সময় মত স্কুল আসা যাওয়ার মধ্যে যথেষ্ট অবহেলা আছে বহু স্কুলে। এসময় সমস্যা থেকে কেটে উঠতে সবার আগে কতৃপক্ষের তদারকি তারপর শিক্ষকদের এবং অভিভাবকদের আন্তরিকতা খুবই প্রয়োজন।
ফরাজীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাতেন'সহ আরো কয়েকজন বলেন, আমরা ব্যক্তিগত ভাবে চাই প্রধান শিক্ষক পদে নতুন নিয়োগ হোক না সিনিয়রদের পদোন্নতি দেয়া হোক। কারণ সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম একটু ব্যহত হয়। তাই আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ করব যাতে দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আখতার হোসেন বলেন, পদোন্নতি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ স্কুল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় পাঠদান কার্যক্রম একটু ব্যাহত হতে পারে। তবে আমরা আশাবাদী যে দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা দায়িত্বশীলতার সাথেই কাজ করছেন।
কেকে/এআর