প্রাচীন ঐতিহ্যের আলোকে আধুনিক যুগের ব্যস্ত জীবনে রূপকথার মতো এক বিয়ের সাক্ষী হলো ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার প্রত্যন্ত নবগ্রাম। গ্রামটি জুড়ে মানুষের মুখে মুখে এই অনন্য আয়োজনের গল্প। যুবক জিসান, তার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে, হাতিতে চড়ে বিয়ে করতে গেলেন এবং নববধূকে নিয়ে এলেন সোনালী পালকিতে। যুবক জিসান ওই গ্রামের ফারুক হোসেন বিশ্বাসের ছেলে ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বিশ্বাসের নাতি ছেলে।
বিয়ের দিন দুপুর ২টায় শুরু হয় শোভাযাত্রা। এক সজ্জিত হাতি। তার ওপর বসে বর। গায়ে রঙিন শেরওয়ানি, মাথায় সুসজ্জিত পাগড়ি, হাতে তরোয়াল। পেছনে পালকি আর ঘোড়ার টমটম গাড়ি। চারপাশে ফুলের গন্ধ। ঢাক-ঢোলের তালে তালে শোভাযাত্রা গ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছলি, পুরো গ্রাম যেন উৎসবে মেতে উঠেছিল। এমন রাজকীয় শোভাযাত্রা পাশ্ববর্তী বড় মৌকুড়ী গ্রাম ঘুরে একই গ্রামে পশ্চিমপাড়ায় নবধূর বাড়িতে পৌঁছায়। সেখানেও রাজকীয় পরিবেশে বরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নববধূ জেবা খাতুন ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে।
প্রবীণ ব্যক্তি জিয়ারত হোসেন বলেন, আমাদের শৈশবে এমন বিয়ের আয়োজন ছিল সাধারণ ঘটনা, কিন্তু আজকের যুগে এটা বিরল। নিশান ছেলেটা যেন হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিলো। এমন আয়োজন দেখার পর মনে হচ্ছে জীবনটা আবার রঙিন হয়ে উঠেছে।
বরের বাবা ফারুক হোসেন বিশ্বাস জানান, আমার ছেলে বরাবরই সৃজনশীল। তবে আমার পিতার চাওয়া ছিল এমন কিছু করতে, যা সবাই মনে রাখবে। তাই এই আয়োজন। হাতিতে চড়া আর পালকিতে বউ আনার পরিকল্পনা আমাদের পুরো পরিবারের কাছে এক রূপকথার মতো মনে হয়েছিল। যখন সবাই এটা বাস্তবে দেখল, তারা মুগ্ধ হয়ে গেল।
এখানেই শেষ নয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নববধূকে নিয়ে বর ফিরলেন পালকিতে। চারজন বাহকের কাঁধে শোভিত সেই পালকি যেন রূপকথার গল্পের এক অধ্যায়। এই বিয়ে শুধু দুটি মানুষের মিলন নয়, বরং একটি সমাজের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। হাতি আর পালকির সংমিশ্রণে যে রূপকথা শুরু হয়েছিল, তা মানুষের মনে চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে থাকবে।
ককে/এএম