ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মাত্র চার হাজার টাকার মোবাইলের জন্য মহসিন মিয়া (২৪) নামের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালককে খুন করে লাশ পরিত্যক্ত ঘরে রেখে পালিয়ে যায় রাসেল মিয়া (২৮) নামের এক ব্যক্তি।
গত বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে। তার দেওয়া তথ্যমতে বৃহস্পতিবার সকালে খুন হওয়ার ১০ দিন পর একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত মহসিন মিয়া (২৪) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের রাণিয়ারা গ্রামের আয়েত আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলের বয়স ৪০ দিন আর মেয়ের বয়স তিন বছর।
গ্রেফতার হওয়া রাসেল মিয়া (২৮) কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের মন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে থানা হাজতে রয়েছে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহসিন মিয়ার কাছ থেকে রাসেল মিয়া ৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরাতন মোবাইল সেট ক্রয় করেন। মোবাইল কেনার জন্য তিনি চার হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করেন। কিন্তু মহসিন মোবাইল থেকে নাম্বারগুলি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য মোবাইলটি নিয়ে নেয়। কিন্তু মহসিন মোবাইলটি ফেরত দেয়নি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে রাসেল মিয়া মহসিনকে তার বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এর পর থেকে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি মহসিন। রাসেলকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরদিন মহসিনের বাবা কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করে। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রামের বাশখালী এলাকা থেকে রাসেল মিয়াকে গ্রেফতার করে কসবা থানা পুলিশ।
রাসেলের দেওয়া তথ্য মতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের আবুল কালামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির টিনের ঘর থেকে অর্ধগলিত মহসিনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কসবা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল সিকদার বলেন, রাসেল মিয়া ওই মোবাইলের চার হাজার টাকার জন্য আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে মহসিনকে খুন করে পরিত্যক্ত বাড়িটির টিনের ঘরে ফেলে পালিয়ে যায়। তার ভাষ্য ও তথ্যমতে ওই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশটির ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী কান্না করছে, আমার ৪০ দিনের বাচ্চাটারে এতিম করে দিয়েছে। মায়ের কোলেই বাচ্চাটি কান্না করছে। যারা তার স্বামীকে খুন করেছে তাদের ফাসিঁ দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী জুলেখা বেগম। কাদঁতে কাদঁতে তিনি বলেন, রাসেল আমার স্বামীর কাছে চার হাজার টাকা পায় বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। তার স্বামী আসলে তাকে জিজ্ঞাসা করবো বলেছি। ১৬ ডিসেম্বর রাতে তাকে ডেকে নিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়।
নিহতের বাবা আয়েত আলী বলেন, তার ছেলে অটোরিকশা চালাত। রাসেল ১৬ ডিসেম্বর রাতে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়েছে। আর ফিরে আসেনি। রাসেল আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে তার ছেলেকে খুন করেছে। খুনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল কাদের বলেন, মহসিন একজন অটোরিক্সা চালক। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। তার ৪০ দিনের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। প্রধান আসামি রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কেকে/এএম