৫১ বছরের পুরোনো সখীপুর উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের কুতুবপুর কলার হাট এখন সবার মুখে মুখে। দিন যত যাচ্ছে ততই সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। কলার হাট হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা হাটটিতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫ কোটি টাকার কলা বিক্রি হয়ে থাকে।
তবে হাটবারের আগের দিনই কলা বিক্রির জন্য চাষীরা হাটে কলা এনে পসরা সাজিয়ে রাখে। এখান থেকে কলা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকার কলা যায় ঢাকা নগরীসহ জেলা শহরগুলোতে। আর বাকি কলা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয় কলা চাষী, ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদারদের সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কুতুবপুর বাজারের কলা ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি হাটে এখান থেকে ভরা মৌসুমে ৪’শ থেকে ৫’শ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। মৌসুম ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে আড়াই’শ থেকে ৩’শ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলা চাষিরা সাইকেল, ভ্যান, অটো, পিকআপে করে কলার কাঁদি নিয়ে বিক্রি করতে এসেছেন। নানা জাতের এসব কলা কিনতে দূর-দূরান্তের বেপারিরাও ভিড় জমিয়েছেন। চাষিদের সঙ্গে দরদাম নিয়ে কথা বলছেন। দরদামে মিলে গেলে ব্যবসায়ীরা এসব কলা বিভিন্ন পরিবহনে করে নিয়ে চলে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তে।
ঘাটাইল উপজেলার বাগাড়া গ্রামের কলা চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, হাট টিতে উপজেলার কুতুবপুর, বড়চওনা, দাড়িপাকা, শ্রীপুর, তৈলধারা, মুচারিয়া পাথার, শালগ্রামপুর, ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী, জোড়দিঘী, গারোবাজার,মধুপুর উপজেলার মহিষমারা, শালিকা, আশ্রা, নেদুরবাজার এবং ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কৈয়াদি, ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলতলা, এনায়েতপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার উৎপাদিত কলা বিক্রি হয় এই হাটে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সপ্তাহে শনি, রবি, মঙ্গল ও বুধবার এখানে কলার হাট বসে। কলাচাষি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এ হাটে কলা আমদানি করেন। এরপর তাঁদের কাছ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সেগুলো কিনে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন।
কলার কাঁদির ওপর নির্ভর করে দাম কমবেশি হয়ে থাকে বলে জানান ভালুকা থেকে আসা কলা চাষী আপন মিয়া। তিনি আরও জানান, এ বাজারের কলাগুলো খুবই উন্নত মানের এবং এখানকার কলার চাহিদা দেশের সর্বত্রই রয়েছে। এ কারণে এখানে কলার দামও একটু বেশি পাওয়া যায় ।
তিনি আরও জানান, প্রতি কাঁদি কলা ১৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে কাঁদি, স্বাদ ও মানভেদে দাম ওঠানামা করে। ছোট আকারের কলা প্রতি কাঁদি ১৫০ টাকা, মাঝারি আকারের কাঁদি ৩০০, বড় আকারের কাঁদি সাড়ে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন খোলা কাগজকে জানান, সখীপুরসহ এ অঞ্চলের মাটি কলা চাষে বেশ উপযোগী। ৩০ বছর আগে এ উপজেলায় প্রচুর কলার চাষ হতো। ১০ বছর আগে কলা চাষ কমে যায়। তবে আবার কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। এ বছর উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কেকে/এইচএস