রামগঞ্জ-ঢাকাগামী রুটের সড়কে পরিবহণ মালিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আইন অমান্য করে নিম্নমানের বাস সার্ভিস, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে যাত্রীরা দীর্ঘদিন যাবত অভিযোগ করে আসলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি না থাকায় বাস মালিকরা ইচ্ছা অনুযায়ী নিম্নমানের এসব বাস সার্ভিস দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জুলুম ও হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন যাত্রীরা। পরিবহণ মালিক, শ্রমিকদের নৈরাজ্য, অরাজকতা, অনিয়ম বন্ধে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তাঁরা।
রামগঞ্জ বাস টার্মিনাল ও বাস কাউন্টার অফিস সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-গৌরিপুর-কচুয়া-ঢাকা রুটে আল আরাফাহ পরিবহণের ২০টি ও আল-আরাফাত এক্সপ্রেস লিঃ পরিবহণের ৬৬টি বাস চলাচল করে। দুরুত্ব ১শত ৭ কিলোমিটার। ভাড়া আদায় করছেন ৩শত ৫০ টাকা থেকে ৫শত টাকা।
রামগঞ্জ-সোনাইমুড়ি-লাকসাম-ঢাকা রুটে প্রতিদিন আল বারাকা পরিবহণ ৩৭টি বাস ও হিমালয় পরিবহণের ৩৬টি বাস চলাচল করে। দূরুত্ব ১ শত ৬৮ কিলোমিটার, প্রতি সিট ভাড়া আদায় করছেন ৪ শত ৭০ থেকে ৫শত টাকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর থেকে আন্তঃনগর বাসের প্রতি কিলোমিটার ভাড়া (৫১ আসনের ক্ষেত্রে) ২টাকা ১২ পয়সা। এ ছাড়াও প্রতি বছরে একবার বিআরটিএ নির্ধারিত অফিসে ইঞ্জিন, কালার, লাইটিং, সিট, দরজা-জানালাসহ সংস্কারকৃত পরিবহণ নিয়ে রুট পারমিট নবায়ন করতে হয়।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী আল আরাফাহ পরিবহণ ৩শত ৫০ থেকে ৫শত টাকা, আল-আরাফাহ এক্সপ্রেস পরিবহণ ৩শত ৫০ থেকে ৫শত টাকা টিকেট প্রতি আদায় করছেন। আল বারাকা পরিবহণ ৪শত ৭০টাকা থেকে ৫শত টাকা, আসন সংখ্যা ৪০টি, হিমালয় পরিবহণ ৫শত টাকা, আসন সংখ্যা ৪০টি। কিন্তু আল আরাফাহ এক্সপ্রেস পরিবহণের ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩২১৭ ও ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৮৭২৬, আল আরাফাহ পরিবহণের ঢাকা মেট্রো ল ১৫-৯২০১ গাড়ীসহ সবগুলো বাসের সিট (চালকের আসন ব্যতিত) ৪৬টি সিট। এ সময় ড্রাইভার জহিরুল, রুবেল জানান, এই সব পরিবহনের সবগুলো গাড়ীর সিট ৪৬টি হয়ে থাকে। এ সময় টার্মিনালে থাকা পরিবহণের অধিকাংশ বাসের হেড লাইট, সামনের ও পিছনের গ্লাস, লুকিং গ্লাস, সিটসহ গাড়ির বডি ভাঙ্গাচুরা, রংহীন পুরাতন দেখা যায়।
যাত্রী জহিরুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, সাইফুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে বলেন, পরিবহণ মালিকরা বছরের পর বছর গাড়ীগুলো সংস্কার না করে ভাঙ্গাচুরা গাড়ি দিয়ে ও গাদাগাদি করে সিট বসিয়ে যাত্রীদেরকে কষ্ট দেয়। এ ছাড়াও রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-কচুয়া-ঢাকাগামী পরিবহণগুলো সরকারিভাবে নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে ৮০টাকা ও হিমালয় পরিবহন ৩০টাকা করে বেশী নেয়। তারা ঢাকার গাজীপুর ও মিরপুর যাওয়ার কথা বলে অতিরিক্তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের পথে নামিয়ে অন্য গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। এতে শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রী এবং মালামাল নিয়ে চরম হয়রানি স্বীকার হতে হয় যাত্রীদের। তারা আরা জানান, এ ব্যাপারে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লেখালেখি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করেছি। আমাদের দাবী সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
হিমালয় পরিবহনের পরিচালক খন্দকার মিজানুর রহমান জানান, ৫ আগষ্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররাসহ প্রশাসনের লোকজন বসে সিদ্ধান্ত ও বিআরটিএ নির্ধারন ভাড়া অনুযায়ী আমরা ভাড়া নিচ্ছি। দুই একটা গাড়ীর সমস্যা হলে সেগুলো গ্যারেজে থাকে। ফিটনেস ও রুট পারমিটসহ আমাদের গাড়ীর কাগজপত্র ঠিক আছে।
বিআরটিএ লক্ষ্মীপুর জেলার সহকারি পরিচালক কামরুজ্জামান সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন জানান, নির্ধারিত ভাড়ার বেশী নিলে এবং গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক না থাকলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এআর