খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা প্রয়োজন।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত দ্বাদশ অধিবেশন এই দাবি জানিয়েছেন তিনি।
অধিবেশনে মাওলানা আজাদ বলেন, চূড়ান্ত বিজয় এখনও আসেনি। সমাজে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সকল প্রকার দুর্নীতি, জুলুম ও অবিচার মূলোৎপাটন করতে আমূল সংস্কারের প্রয়োজন।
তিনি সরকারের কাছে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের কার্যকারিতা আরও দৃশ্যমান করার দাবি জানান এবং প্রশাসনিক সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষা ও সংবিধান সংস্কারে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন আশা করেন।
এছাড়া, আগুন সন্ত্রাসসহ সকল নাশকতা রুখে দিতে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা সমূহের নিরাপত্তা জোরদার করুন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর গণহত্যাসহ সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করুন। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিং জোরদারের উদ্যোগ নিন। পাচারকৃত সকল অর্থ ফিরিয়ে আনুন। ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন কমিয়ে আনুন। ২০২৫ এর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
মাওলানা আজাদ তার বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, এখনও আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চরম হুমকির সম্মুখীন। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর আধিপত্যবাদী আচরণ আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত হয়ে দেশ রক্ষায় কাজ করার আহ্বান জানান। একত্রিত হতে পারলে আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবো, বলেন তিনি।
খেলাফত মজলিসের আমির আরও বলেন, দেশের সর্বস্তরে সংস্কারের জন্য খেলাফত ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। একটি সত্যিকার কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে হলে রাষ্ট্রে আল্লাহর রবুবিয়্যাত প্রতিষ্ঠা আবশ্যক। তিনি দাবি করেন, ইসলামী আদর্শে পরিচালিত রাষ্ট্রে বৈষম্য, দারিদ্র্য, জুলুম এবং অবিচার থাকবে না, এবং রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
খেলাফত মজলিসের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে, দলটি ঈমান ও আমলে সালেহর অধিকারী যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে কাজ চালিয়ে যাবে। তারা ইসলামী আদর্শে ভিত্তি করে নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হাজারো আলেমকে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে। তাদেরকে মানুষই মনে করেনি। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকষ দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। শাপলা চত্বরে আলেমদেরকে হত্যা করেছে। সবাইকে এই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, একটা দুঃসময় আমরা পার করেছি। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন। বিগত ১৬ বছর আমাদের কেউ বাড়িতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। হামলা-মামলার শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ভারত পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সাথে তামাশা করছে।
এই অধিবেশনে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে খেলাফত মজলিসের নেতারা এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার পক্ষে তাদের সমর্থন জানান।
ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী লীগ মূলত ভারতের সরকার ছিল। ভারতের স্বার্থ ছাড়া তারা দ্বারা দেশের কোন কল্যাণ হয়নি। জনগণের মতামত তোয়াক্কা না করে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হয়নি। দেশ রক্ষা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
খেলাফত মজলিসের এই অধিবেশন উদ্বোধন করেন সাবেক আমীর ও বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক।
এই অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, খেলাফত মজলিস নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতি সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাগপা সভাপতি রাশেদ প্রধান, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
কেকে/এএম