১ জানুয়ারিতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর বসতে যাচ্ছে পূর্বাচলের স্থায়ী ভ্যানুতে। অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ১ জানুয়ারি (বুধবার) সকাল ১০টায় মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকে বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করবেন । যেখানে ৪র্থ বারের আসর জমাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্টল বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা। তবে ঢাকা বাইপাস সড়কের ৮ লেনে উন্নীতকরণের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় এবারও ধুলোবালি ও যানজটে যাতায়াত ভোগান্তির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেলা সংশ্লিষ্টরা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে (বিসি এফইসি) মেলা ঘিরে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে যাতায়াত সড়কের মেরামত ও সংস্কারের কাজ। যদিও ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজের প্রভাবে এবারও ভোগান্তি পোহাবেন রাজধানী ছাড়া বাহিরের জেলা থেকে আসা ক্রেতা দর্শনার্থীদের।
এবারের মেলার প্রবেশ গেইট জুলাই-আগষ্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের আদলে সাজানো হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সহকারী পরিচালক ও বাণিজ্য মেলার সহকারী পরিচালক আবু হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ জন্য মেলা প্রাঙ্গণে তোড়েজোড়ে চলছে প্যাভিলিয়ন সাজসজ্জার কাজ।
প্রতিবছরই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নতুন কিছু সংযোজন করা হয়। সে হিসাবে এবারের মেলায় মূল আকর্ষণ হচ্ছে- গত জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার যে আত্মত্যাগ সেটা সামনে রেখে মেলা সাজানো হচ্ছে। শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে মেলা প্রাঙ্গণে শহীদ আবু সাঈদ কর্ণার ও মীর মুগ্ধ কর্ণার নামে দুটি কর্ণারও রাখা হচ্ছে। থাকছে যুবকদের জন্য (ইয়ুথ) প্যাভিলিয়ন। মেলায় এবার ছোট-বড় মিলিয়ে প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ৩৬২টি। ইতোমধ্যে প্যাভিলিয়ন ও স্টল, খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁর কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজের অগ্রগতি ৫০ ভাগ।
এবার প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে ১০০টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ১৫টি, জেনারেল স্টল, ফুডকোর্ট, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল প্রায় ১৭০টি এবং ইউটিলিটি বুথ রাখা হয়েছে ৩০টি। এছাড়া এখন পর্যন্ত মেলায় তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থাকবে। এরমধ্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং ট্যাক্স ভ্যাটের সংরক্ষণের জন্য সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ থাকছে। এতে করে রাজস্ব আদায় ভালো হবে।
ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংকের বুথ স্থাপন হয়েছে। পাশাপাশি হলের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়াতে এক সঙ্গে ৫০০ মানুষ বসে খাবার খেতে পারবে। এছাড়া মূল প্যাভিলিয়নের বাইরে খোলা স্থানে আরও ১২-১৫টি ফুড স্টল থাকছে। এবারও বাণিজ্য মেলায় ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বিদেশী ১৫টি স্টলে তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে।
এবছর মেলার টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে জানিয়ে ইপিবির সহকারী পরিচালক ও বাণিজ্য মেলার সহকারী পরিচালক আবু হাসান বলেন, এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। ই-টিকেটিং হলে দর্শনার্থীরা মোবাইলে কিউআর কোড দেখিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে পারবে।
গত বছরের মতো এ বছরও মেলায় প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা আর অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৫ টাকা থাকছে। মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য গত বছরের মতো এবারও স্পেশাল বিআরটিসির দ্বিতল ও ডাবল ডেকার বাস থাকছে। কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণে ১৪ কিলোমিটার সড়কে ভাড়া থাকছে ৩৫ টাকা। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিদিন গাড়ি চলাচল করবে। শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। গাড়ি পার্কিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। তাছাড়া এবারই প্রথম নদী পথে ট্রলার যোগে মেলায় আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভিন্ন নৌ পরিবহনের আয়োজনে।
মেলার সামনে সড়ক যাতায়াত নিরাপদ ও শৃঙ্খলায় রয়েছেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। কথা হয় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রাজিব বাহাদূরের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে ৫ শত পুলিশ সদস্য এ মেলা ও সড়কের যাতায়াত নিরাপত্তায় কাজ করছি। আশা করছি অতীতের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলবো।
মেলায় স্টল পাওয়া ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম বলেন, সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন কিছু পাবো, নতুন পন্যও থাকবে আশা করি। তবে এবার বাড়তি লঞ্চ ও ট্রলার রয়েছে। ফলে নদী পথে নদী পারের লোকজনও নির্বিঘ্নে মেলায় আসতে পারবে। পাশাপাশি ৩শ ফুট সড়কের যাতায়াত আরামদায়ক হওয়ায় রাজধানীর লোকজন আসবে বেশি।
কেকে/এমএস