চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী দিদারুল আলম বিভিন্ন সময় নিজেকে 'কাঞ্চননগরের প্রধানমন্ত্রী' উপাধি দেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চাষি থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ফাঁকি দিয়ে নিজের পকেট ভারি করার অভিযোগ এ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সরকারি বিধান মতে, পরিষদের অভ্যন্তরীন সকল আয় সচিবের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু তা না করে রাষ্ট্রীয় আয় তছরুপ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। তিনি দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে চলতি বছরের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) মো.রায়হান হোসেন।
জানা যায়, জাতীয়তা সনদ, জন্ম ও মৃত্যু, ওয়ারিশান সনদ, প্রত্যয়ন, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ ইউনিয়ন পরিষদে ৮টি পর্যায়ে আয়ের খাত রয়েছে। এরমধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ও খোয়ার বাবদ জমার হিসাব ইউপি সচিবের কাছে থাকলেও বাকি ৭ টি খাত চেয়ারম্যান নিজের হাতে রেখে দেন। এ খাতের সব আয় আদায়ে দায়িত্বে ছিলেন চেয়ারম্যানের নিয়োগকৃত নিজস্ব লোক।
• ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের অভিযোগ
• জন প্রতিনিধির ভাতা বকেয়া ৩ বছর
• সাড়ে তিন বছর আয়-ব্যয়ের হিসাব নেই পরিষদে
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদ ভবনের দেয়ালে সিটিজেন সার্টার টাঙ্গানো আছে। তাতে লেখা রয়েছে প্রতিটি জন্ম ও মৃত্যু সনদ ফি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে নিতে হবে। বাকি গুলোর মধ্যে জাতীয়তা সনদ পেতে ১০০ টাকা, ওয়ারিশান সনদে ৩০০ টাকা। সকল প্রকার প্রত্যয়নের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও ফৌজদারী ও দেওয়ানী অভিযোগের জন্য যথাক্রমে ১০ এবং ২০ টাকা ফি বাধ্যতামুলক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় ৪ টি বালু মহাল, দুইটি ইটভাটা ও একটি চা বাগান থেকে পরিষদের নামে বাৎসরিক টাকা নিলেও রশিদ না দেওয়ার অভিযোগ আছে চেয়ারম্যান দিদারের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিষদের একাধিক সদস্যের সাথে কথা হলে তাঁরা জানান, পরিষদের অভ্যন্তরীন আয় খাতের বড় একটি অংশ চেয়ারম্যান নিজস্ব লোকের মাধ্যমে আদায় করতেন। প্রথম দিকে এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান তাদের ভুল বুঝে দুরত্ব তৈরি করে। পরে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে সহ্য করে গেছেন তাঁরা।
পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) মো. রায়হান হোসেন বলেন, 'অভ্যন্তরীন কয়েকটি আয়ের খাত চেয়ারম্যান নিজে দেখতেন। যে কয়েকটি খাতের আয় আমি দেখেছি সে সবগুলো সরকারী রাজস্ব ফান্ডে জমা দেয়া হয়েছে। '
চেয়ারম্যান কাজী দিদারুল আলম বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি অন্যায় কিছু করিনি। যা করেছি খাতায় লিপিবদ্ধ আছে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের অন্য কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সটকে পড়েন।'
প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, 'বিগত কয়েক বছরের কাগজপত্র যাচাই করে দেখেছি কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরীন আয় রাজস্ব ফান্ডে জমা হয়নি।তিনি বলেন, আমার উপর দায়িত্বভার ন্যম্ত হওয়ার পর রাজস্ব আয় যথাযতভাবে সরকারী রাজস্ব জমা ফান্ডে হচ্ছে। এতদিন ফান্ডের অভাবে ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের দীর্ঘ দিনের সম্মানী ভাতা দেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এদের কারো সম্মানী ভাতা বাকেয়া নেই।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'চেয়ারম্যান দিদার সরকার পতনের পর থেকে পরিষদে অনুপস্থিত রয়েছেন। গত আগষ্ট মাস পর্যন্ত সরকারি কোষাগারে কোন অর্থ জমা হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের ভাতাও বকেয়া রয়েছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা না দেয়ার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।'
কেকে/এআর