চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শাটল ট্রেনে ইংরেজি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর ওপর দুর্বৃত্তদের নৃশংস হামলার প্রতিবাদ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যনারে এ মানববন্ধন করেন তারা।
পরবর্তীতে তারা শহিদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন এবং মূল গেট বন্ধ করে দেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস; আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; শাটলে বহিরাগত কেন, প্রশাসন জবাব চাই; সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই শাটলে হবে না; শাটলে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই; আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই; বহিরাগত বন্ধ কর, আমাদের রক্ষা কর; প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ইংরেজি বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অর্নব সরকার দীপ্ত বলেন, গতকাল (রোববার) আমাদের বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থী শাটলে ছিনতাইকারীদের দ্বারা নির্মমভাবে আহত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা মানববন্ধন করেছি। যেহেতু শাটল ট্রেন অনিরাপদ তাই আমরা শাটল ট্রেন বন্ধ করে দেই। সেই সাথে প্রশাসনের কাছে আমাদের ৪ দফা দাবি পেশ করেছি। যদি ওনারা আমাদের দাবি পূরণ না করেন তাহলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
দাবিগুলো হলো:
১. দুর্বৃত্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
২. শাটলে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে ও বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ স্থায়ীভাবে রোধ করতে কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়া।
৩. প্রতিটি শাটল বগিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কমপক্ষে একজন করে পুলিশ মোতায়ন করা।
৪. ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক বহন করা।
এ সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা আহত হওয়ার কথা শুনেই সাথে সাথে বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রক্টর পাঠিয়েছি। তারা ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে আসলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমরা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছি। তাছাড়া আমরা শাটলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি যেন তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর আমরা দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে আহত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে যাই। উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যালে নেওয়ার সময় একজন অভিজ্ঞ এ্যাটেন্ডেন্টও সঙ্গে ছিলেন যাতে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেলে সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পর, ভুক্তভোগীর পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। প্রো-ভিসি ও প্রক্টরিয়াল বডি ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।
প্রক্টর আরও উল্লেখ করেন, ডিআইজি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাটি অবহিত করি। তারা দ্রুত তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন এবং রাতেই অভিযানে নেমে ৫-৬ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেন।
উল্লেখ্য, রোববার সকালের শাটল ট্রেনে হামলার শিকার হওয়া দুই শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের ন্যাশনাল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন। তারা দুজনই ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ট্রেন থেকে লাফ দেওয়ায় মাথায় আঘাত পান তানজিলা বেগম। ক্ষতস্থানে ১০টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আহত ছাত্র মোরসালিন আহমেদ মিরাজের মুখে ও হাতে জখম হয়েছে। তাকেও একাধিক সেলাই দেওয়া হয়েছে। সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণ করে দুই শিক্ষার্থীই আশঙ্কামুক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।
কেকে/এজে