আব্দুল্লাহপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় অনেক পুরোনো বিশাল মাছের আড়তের অবস্থান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ আসে এই আড়তে। ভোরবেলা চলে পাইকারি বিক্রি। তবে একটু বেলা হলে খুচরা বিক্রিও হয় এই আড়তে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী আড়তটিতে সাড়ে তিন শতাধিক দোকান রয়েছে। যা পরিচালিত হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে। আর এই সমিতির নেতৃত্ব দীর্ঘসময় ধরে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে। দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেও নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়নি এই সমিতির। ফলশ্রুতিতে আড়তটির নেতৃত্বও রয়েছে তাদের হাতে। এখনো সেখানে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন স্বৈরাচারের দোসররা।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া ও ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন খান এবং ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান এই চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় প্রশাসনের বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরও বাজারটি থেকে দখলদারদের সরানো সম্ভব হয়নি।
গত ৫ আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই আত্মগোপনে চলে যায় এসব আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের নিয়ন্ত্রণে মাছ বাজারটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা শুনেছি এ বাজারটিতে নাকি কিছু ব্যক্তির জমি আছে। এদের মধ্যে টঙ্গীর আওয়ামী লীগ নেতা কাজী খোকা ও পশ্চিম থানা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রীরাম চন্দ্র দাস (রাম বাবু) কিছু জমি নিজেদের দাবি করে আসছিলেন। বিষয়টি কতটা সত্য তা আমার জানা নেই। তবে যখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযান আসত তখন তাদের আর সামনে আসতে দেখতাম না। যা নিয়ে নানা সামলোচানও ছিল।
ব্যবসায়ী আরো জানান, ৫ আগস্টের পর বাজার থেকে পালিয়ে যায় আওয়ামী গীগের এ চক্রটি। এর কিছুদিন না যেতেই পুনরায় তারা আবার আসতে শুরু করে এবং বাজারে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালায়। ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরা থেকে গ্রেফতার হওয়া হত্যা মামলার আসামি সিটি করপোরেশনের ৫০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরের ছোট ভাই ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের আস্থাভাজন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী খোকান নেতেৃত্বে বাজারটিতে পুনরায় চাঁদা তোলা শুরু হয়েছে। চাঁদা উঠানোর দায়িত্ব দেয় সাবেক কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া ও মৎস্যজীবী লীগ নেতা শ্রীরাম চন্দ্র দাস (রাম বাবু) কমিটির কোষাধক্ষ্য নবী আলমের আস্থাভাজন আনোয়ারকে।
এদিকে চাঁদা তুলতে গিয়ে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য কৌশলে আনোয়ার ও তার শ্যালক সফিকুলকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে আইডি কার্ড। তারা আব্দুল্লাহপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি মার্কেট নামে দৈনিক ভাড়া আদায়ের রশিদ দিয়ে ২০০ টাকা করে প্রতি দোকান থেকে ভাড়ার নামে চাঁদা উঠায়। ভাড়া রশিদে পরিচালনায় কাজী আশরাফুজ্জামান খোকার নাম রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে চাঁদা উঠনোর দায়িত্বে থাকা আনোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চাকরি করি বেতন পাই।’ আপনি আওয়ামী লীগের সময়েও একই দায়িত্ব পালন করছেন, এখনো বাজার থেকে পলাতক নেতাদের এ বাজার থেকে টাকা পাঠান আর এখান থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করলেই যে ভাড়া উঠানো যাবে না, কে বলছে? আমিও ব্যবসা করি, আমার নিজেরই ১২টা ট্রেড লাইসেন্স আছে। আমার অনেক ব্যবসা।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু বছর আগেও ঠিকমতো তিন বেলা খেতে পারতেন না এই আনোয়ার। আওয়ামী লীগ শাসনামলে এই আড়তে চাঁদার টাকা তুলে তিনি এখন কোটিপতি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে কাজী খোকার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার নিজের জমি আছে। এসব কাগজপত্র সেনা ক্যাম্প ও থানায় জমা দিয়েছি।’ এ সকল জমি আপনার হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রোডস এন্ড হাইওয়ের জমি কোথায় গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার জমির পাশে যদি সরকারি জমি থাকে তাহলে সেটা আমি ব্যবহার করতে পারি।’ নিজস্ব জমিতে কোনো রকম স্থায়ী স্থাপনা করেন না কেন? প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
কেকে/এমএস