কিশোরগঞ্জ-ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের খাবার গাড়িতে চলছে টিকিটবিহীন ভ্রমণের সুযোগ, অভিযোগে জড়িত ক্যাটারার্স ও পুলিশ সদস্যরা। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, এগারোসিন্ধুর গোধূলির খাবার গাড়িতে রাখা হয়েছে কয়েকটি প্লাস্টিকের টুল রঙের খালি বালতি ও প্লাস্টিকের কার্পেট। এসব টুল-বালতি ট্রেনের খাবার গাড়িতে অস্থায়ী আসন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কয়েকজন ক্যাটারার্স সদস্য ডেকে ডেকে যাত্রীদের এসব আসনে বসতে দিচ্ছেন এবং সিটপ্রতি একেকজনের কাছ থেকে ১৫০-২০০ টাকা নিচ্ছেন।
এছাড়া যারা বিনা টিকিটের যাত্রী তাদের বিমানবন্দরসহ অন্য স্টেশন পার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। যারা টাকা দিতে পারছেন তারাই কেবল খাবার গাড়িতে থাকছেন। আর যারা দিতে পারছেন না তাদের সেখানে দাঁড়িয়েও থাকতে দিচ্ছেন না ক্যাটারার্সরা। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটিও হতে দেখা যায়।
‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ স্লোগান বাস্তবায়নে রেল মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও এগারোসিন্ধুর প্রভাতি-গোধূলি ট্রেনের খাবার গাড়িতে নিয়মিত টিকিটবিহীন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫০-২০০ টাকা নিয়ে প্লাস্টিকের টুল ও বালতিতে বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ-ঢাকাগামী ট্রেনের ক্যাটারার্স সদস্য এবং কিছু অসৎ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তারা যাত্রীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে স্টেশন পার করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে এবং এগারোসিন্ধুর প্রভাতি-গোধূলি ট্রেনের খাবার গাড়িতে এই ঘটনা ঘটছে।
প্রতিদিন সকালে ও বিকালে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন। দীর্ঘদিন ধরেই এ কার্যক্রম চলমান থাকলেও ৩১ ডিসেম্বর সরেজমিনে এই চিত্র উঠে আসে।
টিকিট সংকট এবং অসৎ কর্মচারীদের যোগসাজশের কারণে যাত্রীদের টিকিটবিহীন ভ্রমণের এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে অনৈতিক প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিচ্ছেন।
খাবার গাড়িতে রাখা প্লাস্টিকের টুল ও বালতিতে যাত্রীদের বসতে দেওয়া হচ্ছে এবং সিটপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারছেন না, তাদের বসতে বা দাঁড়াতেও দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের সহযোগিতায় যাত্রীদের স্টেশন পার করানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. খলিলুর রহমান বলেন, খাবার গাড়ি শুধুমাত্র খাবারের জন্য। অভিযোগ পাওয়ার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
রেলওয়ে পুলিশের ওসি মো. লিটন মিয়া বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তাদের সতর্ক করা হবে, পরবর্তীতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোরগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ১৫০০ টিকিট বিক্রি হলেও যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে স্ট্যান্ডিং টিকিট চালু রয়েছে। তবে টিকিটবিহীন যাত্রী পরিবহনের কারণে সরকারের রাজস্ব হারানো এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
কেকে/এএম