দেখতে অনেকটা ডাবের মত তবে গায়ের রং সোনালী। একটি নয় সাত আটটি সোনালী রঙের বেল ঝুলছে মাগুরার শালিখা উপজেলার তালখড়ি ইউনিয়নের মনির হোসেনের বেলগাছে যা দেখতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ভিড় করছেন মনির হোসেনের বেল তলায়।
প্রতিটি ফলের ওজন চার থেকে পাঁচ কেজি। গাছটি পথের ধারে হওয়ায় পথচারীদের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউবা আবার হাত দিয়ে বেল ধরে তৈরি করছেন ছোটখাটো ভিডিও আপলোড করছেন নিজের ফেসবুকে। গাছটি খুব বেশি বড় না হওয়ায় বেলগুলো ছুয়েও দেখছেন অনেকে। এমনি একজন পথচারী প্রদীপ বিশ্বাস। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম পথের ধারে এরকম একটি সোনালী ফল দেখে দাঁড়ালাম এবং একটি সেলফি তুললাম। পথচারীদের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। তালখড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বলেন, আমি মাঝে মাঝে এখানে আসি সোনালী রঙের এই বেলগুলো দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। আমার বিদ্যালয়ের সহপাঠীরও এখানে মাঝে মাঝে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এটি মূলত তানপুরা ফলের একটি জাত যা ডুগডুগি ফল, মহাবেল, বিলেতী বেল নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্রিসেনশিয়া কুইহাট। এটি বিগনোনিয়াসিআই পরিবারের উদ্ভিদ। বেলের মতো দেখতে হলেও ফলটি আদৌ বেল নয়। কাঁচা ফলের শরীর মসৃণ ও নরম, মানে নখ বসে যায়। অনেকটা লাউয়ের মতো, আর রং গাঢ় সবুজ।
পাকা ফলের খোলস বা বহিরাবরণ শক্ত। কাঁচা অবস্থায় ফলটি কাটলে ভিতরে দুধসাদা শাঁস পাওয়া যায়। ফলটি পেকে গেলে শাঁস কালো ছাইয়ের মতো পদার্থে পরিণত হয়। গাছটি আমেরিকার উষ্ণম-ল তথা দক্ষিণ আমেরিকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ। আমাদের দেশেও বিভিন্ন স্থানে গাছটির দেখা মেলে। শোভাবর্ধক বৃক্ষ হিসেবে বৃক্ষপ্রেমীদের স্বীকৃতি পাওয়ায় গাছটি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃক্ষজাতীয় এই গাছটির গড়ন অনেকটা বেলগাছের মতোই। কা- ও পাতার ধরন প্রায় একই রকম। তবে এই গাছে কাঁটা নেই; পাতায় বা ফলে বেলের বিশেষ গন্ধও নেই। ডাল লাগালে গাছ হয়।
আমাদের দেশে বিষাক্ত বলে মনে করা হলেও দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ফলটির কাঁচা শাঁস জলে ফুটিয়ে রোগ নিরাময়কারী সিরাপ বানানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগের প্রতিকারে গাছটির ছাল-পাতা ও শিকড়ের ব্যবহার রয়েছে। ফলটির শক্ত ও মসৃণ খোসা ঘর সাজানোর বিভিন্ন দ্রব্য ও বাদ্যযন্ত্র তৈরির উপযোগী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে ফলটির খোসা বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পাকা ফলের খোলস বা বহিরাবরণ শক্ত হওয়ায় এটি ডুগডুগি ছাড়াও নানা শিল্পকর্মে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশের টিপরা আদিবাসী মস্তিষ্ক বিকৃতির চিকিৎসায় এই ফলের ম- মাথায় প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বৃক্ষটি আট মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। আদি নিবাস মধ্য আমেরিকা।
গাছটির মালিক মনির হোসেনের সঙ্গে কথা বলে তিনি বলেন, দুই বছর আগে আমি গাছটি যশোরের একটি নার্সারি থেকে এনেছিলাম গাছটিতে বেশ কয়েকটি ফল ধরেছে ফলের রঙ মূলত সবুজ আমি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সোনালী রং লাগিয়াছি। ফলটির নাম বিভিন্ন জন বিভিন্নতা বলে তবে আমি এই ফলের নাম ভালোবেসে রেখেছি জিয়া ফল।
কেকে/এআর