নতুন বছরে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে দলের পূর্বঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নই হচ্ছে বিএনপির মূল লক্ষ্য। রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে, একটি ‘রেইনবো নেশন’ গঠনে কী ধরেন পরিকল্পনা থাকবে তারই রোডম্যাপ ৩১ দফায় তুলে ধরেছে দলটি। যারা সূচনা হয়েছিল দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ২০১৭ সালে ১০ মে ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামে একটি রূপকল্প তুলে ধরে ছিলেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। সময়ের পরিক্রমায় সরকারবিরোধী রাজনৈতিকদলগুলো নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলে বিএনপি।
আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ঘোষণা করে দলটি। ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে ঐক্যে কোনো ‘ভাটা’ না পরলেও ৩১ দফার সঙ্গে আরো কিছু সংযোজনের প্রস্তাবনা সামনে আনা হয়েছে। বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চের কিছু প্রস্তাবনা আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। ফলে নতুন বছরে ‘শরিকদের’ সঙ্গে ঐক্য ধরে রেখে নতুন বছরে ‘রেইনবো নেশন’ গঠনের বিএনপির সমানে একটা চ্যালেঞ্জ। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিগত দিনে সরকার পতন আন্দোলনে ‘শরিকদলগুলো’ নিয়েই পথ চলতে চায় তারা।
দলটির নেতারা বলেছেন, এ রূপরেখা তৈরি হয় মূলত : শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০, জনসম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রথমে প্রদত্ত ২৭ দফার ওপর ভিত্তি করে, যা পরবর্তীতে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে ৩১ দফায় পরিণত হয়।
জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ৩১ দফা হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে আমাদের ঐক্যর ভিত্তি। ৫ আগস্ট পরবর্তীতে আরো কিছু বিষয় সংযোজন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অন্য আরো যারা রাজনৈতিক দল আছে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এক বুঝাপড়ার মধ্য দিয়েই ঐক্য গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, সংববিধান এবং কিছু আইনের সংস্কার করার প্রয়োজনের কথা সামনে আছে, এগুলো আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নতুন বছর আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমারা ৩১ দফা আলোকেই একটা ঐক্য গড়ে তুলব।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনীতিতে পট পরিবর্তনের পর নতুন বছরে পুরোনো মিত্র নিয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণে সবার মতামত নিতে ‘সংলাপ’ করছে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। ৩১ দফা বার্তা নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন নেতারা। মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, জনগণ আশা করছে নতুন বছর একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। দেশে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ফিরে আসবে। যার মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রত্যাশিত জনপ্রতিনিধি ঠিক করতে পারবে।
তিনি বলেন, নতুন বছরে নির্বাচনি কাজ ও সংস্কার সমানতালেই চলবে। সরকার যে সংস্কার কমিশন করেছে; তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। সবমিলিয়ে নিঃসন্দেহে জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর হবে ২০২৫।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের কাছে বিএনপির প্রত্যাশা দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন তারা। বিএনপিও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন চায়। নির্বাচন যত দেরি হবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তত বাড়বে। এজন্যই বলছি নতুন বছর নির্বাচিত সরকার আসবে।
এক বিবৃতিতে নতুন বছর নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার কালের সাক্ষী হয়ে বিদায় নিল ২০২৪। অতীতের সফলতা ও ব্যর্থতার ওপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য এখন দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতে হবে। একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণই আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য হবে। নতুন বছর অর্জন আর প্রাচুর্যে, সৃষ্টি আর কল্যাণে সমৃদ্ধ হোক। তিনি আরো বলেন, আমাদের হয়তো আরো কষ্টকর পথ অতিক্রম করতে হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্রের চর্চা এবং বিকাশ সাধনে আমাদের আরো বেশি তৎপর হতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। নতুন বছরে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশেবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে এক বার্তায় বলেছেন, পুরোনো বছরের ব্যর্থতা, গ্লানি, হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে নবউদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় নববর্ষ। নতুনকে বরণ করা মানুষের সহজাত প্রবণতা। নতুন বছরে আমরা দেশের সামগ্রিক রূপান্তরের একটি পর্বে উপনীত হতে পারব বলে আশা রাখি। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আসুন আমরা রাষ্ট্র ও সমাজে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একযোগে কাজ করি। আমরা এমন একটি জাতি নির্মাণের প্রত্যাশা করছি, যেখানে প্রত্যেকটি নাগরিকই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেকের কণ্ঠ স্বাধীন থাকবে।
তিনি বলেন, গত বৎসরের বেশকিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা, ছাত্র-জনতার আত্মদান এবং অধিকার হারানোর যন্ত্রণা আগামী বছরে আমাদের একদিকে যেমন বেদনার্ত করবে আবার অন্যদিকে নুতন উদ্যোমে শান্তি, সম্প্রীতি ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনায় আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে। আমাদের অঙ্গীকার হবে- জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধারসহ বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনে একযোগে কাজ করা। বাংলাদেশে অজস্র রক্তঋণে অর্জিত গণতন্ত্রের প্রয়োগ ও অনুশীলণে আমাদের তৎপর হতে হবে। গণবিরোধী পরাজিত শক্তি এতদিন জনগণের সব অধিকারকে বন্দি করে রেখেছিল। এমতাবস্থায় সব গণতান্ত্রিক শক্তির মিলিত প্রচেষ্টায় বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করতে হবে।
নতুন বছরে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানান তারেক রহমান।
কেকে/এজে