চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিটের অধীনে পরিচালিত ‘সুফল’ প্রকল্পে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুরু হওয়ায়, এর আওতায় ৪০ হেক্টর বনে এক লক্ষ মিশ্র প্রজাতির দ্রুত বর্ধনশীল চারা রোপণের কথা ছিল। তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের বাস্তবায়ন কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ ছিল এবং প্রকল্পের নামে সুকৌশলে বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাট করা হয়েছে।
চুনতি সাতগড় বনবিটের বাগানের সাইনবোর্ডে ৪০ হেক্টর জায়গায় এক লক্ষ চারা রোপণের কথা বলা হলেও বাস্তবে মাত্র ২৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। আর, এ চারা গুলি ছিল মূলত আকাশমনি ও অন্য সাধারণ গাছের চারা, যা প্রকল্পের ঘোষিত প্রজাতির সাথে মেলেনি। সাইনবোর্ডে বিভিন্ন ধরনের গাছের নাম উল্লেখ থাকলেও, এর কোন বাস্তব ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
প্রকল্পের এই অনিয়ম ও দুর্নীতির পেছনে গোপন আঁতাতের কথা জানান স্থানীয়রা। তারা দাবি করেন, যেসব প্রজাতি গাছ রোপণের জন্য নির্দেশনা ছিল, সেগুলোর একটিও যথাযথভাবে রোপণ করা হয়নি। বরং, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল প্রজাতির চারা রোপণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের একটি বড় অভিযোগ হলো, কাজের জন্য বিভিন্ন শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে দুর্নীতি করা হয়েছে।
এক শ্রমিক জানায়, প্রকল্পের কাজে স্থানীয়দেরকে ৩০-৪০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছে, এবং বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানোর অভিযোগও উঠেছে। বিশেষত, রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে তাদেরকে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দেওয়া হয়েছে, তবে মাস্টার রোলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়াও, প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় খুঁটি, বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণের সরবরাহ না হওয়ার বদলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিজে মাটি ও বাঁশ সরবরাহ করেছেন।
প্রকল্পের সাইনবোর্ডে ১ লাখ গাছের চারা লাগানোর কথা ছিল, তবে বাস্তবে তা ছিল প্রায় অর্ধেকেরও কম। সাইনবোর্ডে দেওয়া গাছের প্রজাতি যেমন গামার, চিকরাশি, আকাশমনি, পিতরাজ ইত্যাদি থাকলেও, প্রকল্পে কার্যকরভাবে এমন গাছের দেখা পাওয়া যায়নি। বরং, আকাশমনি গাছই ছিল প্রধানত রোপিত।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রকল্পের বাগানের যত্ন নেওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সার দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি, ফলে চারা মারা গেছে। কেউ কেউ জানান, যে চারাগুলি রোপণ করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশই প্রথম বছরেই মারা গেছে এবং দ্বিতীয় বছরে সারের অভাবে আরও চারা নষ্ট হয়েছে।
এছাড়া, ৬ ফুট পর পর চারা রোপণ করার কথা থাকলেও, বাস্তবে প্রায় ১০-১২ ফুট পর পর চারা রোপণ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের বনায়ন সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে বন বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে। চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি, এবং বাগানের অনিয়মের বিষয়টি তদন্তাধীন, তবে তিনি বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
স্থানীয় সাঈদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংক যে ঋণ দিয়েছে সুফল প্রকল্পের জন্য, তা যদি এভাবে লোপাট হয়, তবে বন বিভাগের ঋণের দায়ভার কীভাবে বহন করবে?
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে এবং প্রকল্পের সমন্বয় সাধনকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে, তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানাতে চাননি।
কেকে/এএম