মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি ২০২৫,
২৪ পৌষ ১৪৩১
বাংলা English

মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: তামিমের ফিফটিতে বরিশালের বড় জয়      দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের আওতায় টিউলিপ সিদ্দিক      কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ রাষ্ট্রপতির      বিএনপি-জামায়াত বাগযুদ্ধ, কৌশল নাকি দ্বন্দ্ব      পদবঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে ৭৫ কোটি টাকা      মেট্রোরেলের সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি দিল এনবিআর      রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন তারেক রহমান      
প্রিয় ক্যাম্পাস
বেরোবিতে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আ.লীগ পন্থী শিক্ষকদের তোড়জোড়
মো. ইমন আলী, বেরোবি
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪:৪১ পিএম  (ভিজিটর : ১০০)
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করেই শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষকদের একাংশ । এমনকি  গত ২ জানুয়ারি ২০২৪, তোড়জোড় করেই অধিকাংশ শিক্ষকের অগোচরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে নানা বির্তক।

গঠিত কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত আমির শরীফ এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের বর্তমান কার্যকরী সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানজিদ ইসলাম ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক বিপুল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আওয়ামীলীগ আমলে শুরু হওয়ায় এখানে নিয়োগ প্রাপ্ত সিহংভাগ শিক্ষকই আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত। ২০৬ জন শিক্ষকের মধ্য প্রায় ১৮০ জনই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন বলে একধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে  আওয়ামীলীগের তিনটি ভাগের মধ্যে নীল দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯০ জন। এছাড়া প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের মধ্যে দুইটি ভাগে আরো ৯০ জন শিক্ষক রয়েছেন। নীল দল ও প্রগতশীল শিক্ষক সমাজের একটি অংশ বিগত প্রশাসনের সাথে থাকায় এই দুই অংশের নেতারা অনেকটাই অসস্তিতে আছেন। অনেকেই গা ডাকা দিয়েছেন। তবে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজে আরেকটি অংশ আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও নিয়োগ জালিয়াতির বিতর্ক কান্ডে জড়িত, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের  সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানের নেতৃত্বে নির্বাচনী অনুষ্ঠানের জন্য তোড়জোড় করে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য শিক্ষকদের চাপ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এ অংশে তাবিউর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আরো অংশগ্রহন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আতিউর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের মাসুদ হাসান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ইলিয়াস সাব্বির, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের আবু কালাম মো. ফরিদুল ইসলামসহ আরো অনেকে। তবে শিক্ষকদের আশংঙ্কা এবারের নির্বাচনে বিনা ভোটেই নির্বাচিত হবেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের এ অংশ। নির্বাচিত হয়েই বর্তমান প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলবেন। বিএনপি পন্থী শিক্ষদের প্রশাসন থেকে দুরে সরানোরও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

তড়িঘড়ি করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে নির্বাচন গঠন করায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন যেখানে সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে আওয়ামী শিক্ষকদের ক্ষমতায় আনার জন্য পাতানো নির্বাচন আবু সাঈদের রক্তের সাথে বেঈমানি। তবে পাতানো এ নির্বাচন প্রক্রিয়া অনতিবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি সংস্কারের জন্য ছাত্র সংসদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত কোন ধরনের নির্বাচন বেরোবিতে হলে তা কঠিন হস্তে দমন করা হবে।

এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবি প্রতিনিধি শামসুর রহমান সুমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো নির্বাচনের পূর্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নইলে শিক্ষক সমিতি নির্বাচন নামক যে প্রহসন সেটিকে প্রতিহত করবে শিক্ষার্থীরা। জুলাই -আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে আমরা সেই সমিতির প্রহসনমূলক ভূমিকা প্রত্যাক্ষ করেছি। সুতরাং শিক্ষক সমিতির নামে কোন ধরণে লেজুড়বৃত্তিকতা কিংবা আওয়ামী দোসরদের পূনর্বাসন এই ক্যাম্পাসে ঠাঁই হবে না। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সর্বপ্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নইলে আমরা পূণরায় আন্দোলনে নামতে পিছুপা হব না।

এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবি প্রতিনিধি আরমান হোসেন বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় চায় একটি শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস।অথচ সেখানে বিভিন্ন সমিতির নাম দিয়ে নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে একমাত্র ছাত্র সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্খা পূরণ সম্ভব। বিগত দিনে আমরা দেখেছি এসব সমিতি নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা ছাড়া শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। তাই আমরা চাই অতি দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাস্তবয়িত হোক। অন্য কোনো নির্বাচন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনোভাবে মেনে নিবোনা।

নির্বাচনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নীল দলের সভাপতি ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নিতাই কুমার ঘোষকে ফোন কলে পাওয়া যায়নি।

জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে থাকা শিক্ষক ও বিএনপি পন্থী শিক্ষকরা মনে করেন এ নির্বাচন পতিত সৈরাচারীদের দোসরদের পুর্নবাসিত করা হবে।

বিএনপি পন্থী শিক্ষক ফেরদৌস রহমান বলেন, সংস্কারের আগ পর্যন্ত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি গঠন করা হয়নি। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকের অগোচরে শিক্ষক সমিতির সাবেকদের নিয়ে কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটা তারাই ভালো জানেন। বিগত সরকারের আমলে শিক্ষক সমিতি কি ভূমিকা পালন করেছিল সেটা সবারই জানা। শিক্ষক সমিতির শেষ মিটিংয়ে সরকার পতনের এক দাবি উঠলে সভাপতি সেখান  থেকে পালিয়ে যান এবং সরকার পতনের পর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ হত্যার আসামি হওয়ায় পলাতক । তারপরেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত তারা কিসের ভিত্তিতে নিল তারাই ভালো জানেন। আমরা চাই আগে ছাত্র সংসদ গঠনের মাধ্যমে প্রশাসনের সংস্কার আনতে হবে ,পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

তবে বেশিরভাগ শিক্ষকই ভাগাভাগির নির্বাচনকে প্রহসন ও পাতানো বলে আখ্যায়িত করছেন, শিক্ষকরা বলছেন শিক্ষক সমিতি সবসময় রাজনীতির নামে অপরাজনীতিতে লিপ্ত ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে এরকম পাতানো নির্বাচন আয়োজন না করার পরামর্শ সাধারন শিক্ষকদের।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি বিজন মোহন চাকীকে ফোন দেয়া হলে ফোন কলে তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক আমির শরীফ বলেন, আমি এটা নিয়ে আপাতত কাজ শুরু করিনি, আগে সবার পরামর্শ নিব তারপর কাজ শুরু করব। নাহলে আমি এই দায়িত্ব থেকে সরে আসব। রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও আপনারা নির্বাচন করতেছেন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা জানুয়ারির ২০ বা ২২ তারিখে। তাই নির্বাচন হওয়ার জন্য শিক্ষক সমিতি আমাকে এ  দায়িত্ব দিয়েছে। প্রয়োজনে এখন আমি এ দায়িত্ব থেকে সরে আসব।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, আসলে শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে প্রশাসনের কোন অনুমতি লাগে না। কিন্তু সংস্কারের আগে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি গঠনের সিদ্ধান্ত আসেনি। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের একটা আগের প্যানেল কিভাবে এটা গঠন করলো তা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কখনো মেনে নিতে পারে না।

আগামীকাল ছাত্রসংসদ গঠনের খসড়া জমা দিতে পারে প্রতিনিধিরা এবং ২২ জানুয়ারি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের চূড়ান্ত নকশা দেওয়া হবে। ছাত্র সংসদ এবং হল সংসদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক সমিতি নির্বাচন কখনো সম্ভব না।

উল্লেখ্য যে,  গত বছরের ২৮ শে অক্টোবর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

কেকে/এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  বেরোবি   শিক্ষক সমিতির নির্বাচন  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

পদত্যাগের ঘোষণা জাস্টিন ট্রুডোর
‘আওয়ামী বাকশালীরা দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল’
কসবা সীমান্তে ৪ ভারতীয় নাগরিক আটক
তামিমের ফিফটিতে বরিশালের বড় জয়
দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের আওতায় টিউলিপ সিদ্দিক

সর্বাধিক পঠিত

‘আপনি না আসলে নিজের স্টাইলে ৩ জনকে ফালায় দিয়ে বের হয়ে যাবো’
শিবির থাকায় জাতীয় সংলাপ বর্জন ছাত্রদলের
শ্রীনগরে জমি নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির অভিযোগ
সুন্দরগঞ্জে মাদক বিরোধী মতবিনিময় সভা

প্রিয় ক্যাম্পাস- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝