সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বক্তব্য এখন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অনেকের মতে, বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও রাষ্ট্রসংস্কার ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করছে। এসব সমালোচনা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ঐক্যের জন্যও চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তারা।
গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রশিবিরের সদস্য সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় সারজিস আলম জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাজপথে থাকা, পরামর্শ দেওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে সহযোদ্ধার মতো ভূমিকা পালন করেছিল বলে মন্তব্য করেন।
তার এ বক্তব্যকে ঘিরেও তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। ছাত্রশিবিরকে নিয়ে সারজিস আলমের এমন বক্তব্য দেওয়ায় অন্য ছাত্রসংগঠনের নেতাদের মধ্যে অনেকটা অসন্তোষ দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সারজিস আলম তার বক্তব্যে শিবিরকে অনেকটা প্রমোট করেছেন। অনেকে আবার এ বক্তব্যকে একপেশে বলেও অভিযোগ তোলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বৈষম্য দূর করা ও সাম্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠা এ আন্দোলনের নেতারা ক্রমশ কিছু বিতর্কিত অবস্থান ও বক্তব্যের কারণে সমালোচনার মুখে পড়ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তাদের বক্তব্যে প্রথাগত রাজনীতিকে ‘পুরাতন ও বৈষম্যমূলক’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এতে সাধারণ জনগণের একাংশ তাদের প্রতি সমর্থন জানালেও অপর অংশ এতে বিতর্ক দেখছে। তাদের বক্তব্যে ব্যবহৃত কঠোর ভাষা ও রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তীব্র সমালোচনা অনেক সময় অতিকথনে রূপ নিচ্ছে বলেও অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে যখন তারা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করছেন, তখন সেটি বিদ্যমান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের শুরু থেকে শিবির কর্মীদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পেয়েছেন জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, কেউ কোনোদিন কোনো সত্যকে চেপে রাখতে পারে না। সত্য প্রকাশিত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। এ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরকে কাজের মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্যতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের সবকিছুর আগে, ব্যক্তির আগে, গোষ্ঠীর আগে, দলের আগে পুরো দেশের মানুষ। ২৪-এর অভ্যুত্থানে আমরা একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এবং পরিকল্পনার টেবিলে বসে যে কাজগুলো করেছি, আগামী বাংলাদেশ গঠনে দেশের স্বার্থকে সবার আগে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব।’
এদিকে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ দেশের সংবিধান সংস্কার ইস্যুতে বলেছেন, ‘মুজিববাদী ৭২-এর সংবিধানের কবর রচিত হবে।’ একই ইস্যুতে সারজিস আলম বলেছিলেন, ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের একটি দলিল হয়ে থাকবে, যা বিগত সিস্টেম যেগুলো মানুষ গ্রহণ করেনি এবং নতুন যে সিস্টেম চালু হবে তার পার্থক্য হিসেবে। নতুন যারা দেশ পরিচালনায় আসবে তাদের জন্য এ ঘোষণাপত্র একটি নির্দেশক হিসেবে থাকবে। এটি বাংলাদেশের সব মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। যদিও তাদের এ বক্তব্যের সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা ভিন্ন মত জানিয়েছেন।
কেকে/এমএস