জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জয়পুরহাটের কালাইয়ে রাতের আধাঁরে ৫৭ শতাংশ জমির আলু গাছ উপরে ফেলেছে প্রতিপক্ষ। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের মালিক দুই বর্গাচাষী।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জমি দখল নিয়ে গত আমন রোপনের পর প্রতিপক্ষ ওই জমিতে গিয়ে ধান গাছও উপরে ফেলেছিল। ওই সময় মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে। সেই থেকে উভয় পক্ষের আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তারপরও ওই জমিতে আলু গাছ উপরে ফেলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জমির মালিক তেলিহার গ্রামের জালাল উদ্দিন এবং মান্দাই গ্রামের হাসকর আলী বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ বৈরাগী গ্রামের বাসিন্দা মৃত ছফির উদ্দিনের ছেলে নুর আলম (বর্তমানে তালোড়া বাইগুনী গ্রামে শশুর বাড়িতে থাকেন) নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। প্রতিপক্ষের এমন কর্মকান্ডে বর্গাচাষীরা আতঙ্কে জীবনযাবন করছেন।
শনিবার নয়াপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পুরো জমির আলু গাছগুলো উপরে ফেলা হয়েছে। গাছগুলো মাটিতে পড়ে আছে। এ সময় কথা হয় বর্গাচাষী নয়াপাড়া গ্রামের তানজির ও ঠান্ডা মিয়ার সাথে। তারা জানান, ‘দুইজন মিলে জমির মালিক জালাল ও হাসকরের নিকট থেকে ৫৭ শতাংশ জমি এক বছরের জন্য বর্গা নেন। জমিতে লাল জাতের দেশী পাকড়ি আলু রোপন করেন তারা। দুই সেচ দেওয়ার পর গাছগুলো বড় হয়েছে। নিরানি দিয়ে বেঁধে দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জমির মালিকানা নিয়ে তাদের দ্বন্দ্বের জেরে গত রাতে নুর আলম তার লোকজন নিয়ে এসে পুরো জমির গাছগুলো উপরে ফেলেছে। দ্বন্দ্ব জমি নিয়ে তবে ফসল নষ্ট কেন?’
জমির মালিক জালাল উদ্দিন ও হাসকর আলী বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর আগে আমরা নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফ আলী চৌধুরীর নিকট থেকে জমিগুলো ক্রয় করেছি। সেই থেকে ভোগদখল করে আসছি। জমিগুলো সবসময় বর্গা দেওয়া হয়। এবার বর্গাচাষীরা ওই জমিগুলোতে ফসল ফলান। হঠাৎ করে গত বছর বৈরাগী গ্রামের নুর আলম ওই জমিগুলো নিজের দাবী করেন। গত আমন রোপনের সময় তিনি জমিতে এসে ধান গাছ উপরে ফেলায়। জমিগুলো নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। থানায় জমি নিয়ে সালিশও হয়েছে। তারপরও সে বার বার ফসল নষ্ট করেই যাচ্ছে।
তারা আরো বলেন, জমির দলিলপত্র সঠিক থাকার পরও কেন প্রতিপক্ষ আমাদের এত নির্যাতন করছেন। আর কেনই বা সে একের পর এক ক্ষেত নষ্ট করছেন। জমি যদি তারই হয়, মামলার রায় তার পক্ষেই যাবে। আমরা আদালত যে রায় দিবে তা মেনে নিব।
নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও উদয়পুর ইউপি সদস্য নুরনবী সরকার বলেন, আদালতে জমির মামলা চলমান রয়েছে। নুর আলম বারবার বর্গাচাষীদের ফসল নষ্ট করেই যাচ্ছে। জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। কিন্তু ফসল নষ্টের অধিকার কারো নেই। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
আলুর গাছ উপরে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার নুর আলম বলেন, ‘জমি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। আমি আদালতের রায়ে বিশ্বাসী। কেন রাতের আধাঁরে আলুর গাছ উপরে ফেলাবো। দ্বন্দ্ব আছে, দোষ দিতেই পারে। তাই বলে ফসল নষ্ট করতে পারিনা।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আলু গাছ উপরে ফেলার বিষয়ে আমি অবগত, তবে এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেকে/এমএস