পূর্বাচলে ৪র্থ বারের মতো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর চলছে। ভৌগোলিক অবস্থান আর দৃষ্টি নন্দন ভবন, উন্মুক্ত পরিবেশে সর্ব সাধারণের সন্তোষ থাকলেও এ বছর স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা ও ক্ষোভ। একদিকে অনলাইন পদ্ধতি ও সরকার পরিবর্তনের পরিস্থিতিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের না জমার শঙ্কা অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত উদ্যোক্তা তৈরি ও উৎসাহদানের ঘোষণা থাকলেও পুরো মেলা জুরে দেখা যায়নি তরুণদের কোনো স্টল বা প্যাভিলিয়ন। ফলে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসরের ৬ষ্ঠ দিনে লোকসমাগম বেড়েছে কিছুটা। এতদিন পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল না খুব একটা। বিগত সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবে দিনভর স্থানীয়দের আনাগোনা থাকলেও এ বছর স্থানীয়দের অংশগ্রহণ, দর্শনার্থী বা ক্রেতা হিসেবে এখনো মেলায় প্রবেশ করেননি বেশিরভাগ বাসিন্দা।
কথা হয় আব্দুল হক ভুইঁয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ৪ বছর ধরে বাড়ির পাশেই মেলা হচ্ছে। এটা আমাদের রূপগঞ্জের জন্যে গর্বের বিষয়। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এবার অংশ নেয়নি শুনেছি,পাশাপাশি তরুণরাও কোনো স্টল পায়নি। অথচ প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস তরুণদের প্রাধান্য দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাণিজ্য মেলায় এমনভাবে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারের ভৌগোলিক অবস্থান ঢাকা বাইপাস সড়ক ও ৩শ ফুট সড়ক সংলগ্ন এলাকায়। পাশেই বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। আশপাশে রয়েছে গ্রাম অঞ্চল। যা রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও দাউদপুর ইউনিয়নের মধুখালী, ব্রাহ্মণখালী, শিমুলিয়া, মাঝিপাড়া, কালনী, গুতিয়াবোসহ অসংখ্য গ্রাম। আশপাশের গ্রামগুলোতে রয়েছে হস্তশিল্পের কারিগর ও তাদের পল্লি, তারাবো পৌরসভা ও কাঞ্চন পৌরসভায় তাঁত ও জামদানি শিল্প সনামধন্য পন্য। নদী পাড়ের পাটকল আর পাটজাত পন্যেরও সমাহার রয়েছে এখানে। তবে মেলার এসব পন্যের কোনোটাতেই স্থানীয় উদ্যোক্তারা অংশ নিতে পারেননি নানা জটিলতায়।
রূপা টেক্সটাইল মিলের পরিচালক রুপা সিকদার বলেন, পাশের অঞ্চলে বাণিজ্যমেলায় আসর বসে। কিন্তু কাঞ্চনের তাঁত শিল্প, পাওয়ারফুল শিল্প সংশ্লিষ্টের কেউই মেলায় স্টল পায় না। এসব স্টল হাত বদল হতে হতে মূল্য বাড়ে আকাশ ছোঁয়া। ফলে চাইলেই কেউ স্টল পেতে লোকসান ঝুঁকি নিতে চায় না। অথচ মেলায় একই ব্যক্তির ১৮ টা স্টল দেখা গেছে।
রূপগঞ্জের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম বলেন, মেলায় স্থানীয় শিক্ষার্থী, তরুণ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ থাকলে নতুন উদ্যোক্তারা উৎসাহ পেতেন। কিন্তু তরুণদের অংশগ্রহণ না থাকা দুঃখজনক। তবে রাজধানীসহ আশপাশ জেলা থেকে দর্শনার্থীদের আনাগোনায় রূপগঞ্জের নতুন করে পরিচিতি পাওয়ায় আয়োজনে আমরা রূপগঞ্জবাসীর গর্বিত।
মেলায় এবার ৩৬ জুলাই চত্ত্বর ও তারুন্যের বাংলাদেশ, শিশুদের খেলাধুলা, মূল প্যাভিলিয়নে দৃষ্টি নন্দন নকশা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভিডিও এবং স্থিরচিত্রে তরুণদের ব্যানার পোস্টার থাকলেও স্টলগুলোতে দেখা গেছে নিম্ন মানের পণ্য। আবার এসব পন্যের দাম বেশি হাঁকাচ্ছে। আর বাহিরে হকারদের হাঁকডাক পুরো পরিবেশে বিতর্কের জন্ম দেয়।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকা থেকে ঘুরতে আসা গৃহীনি শামীমা আক্তার বলেন, মেলায় এবার যাতায়াত ব্যবস্থা খুব ভালো। তবে মেলার পাশের ঢাকা বাইপাস সড়কে ধুলো বালি ভোগান্তি ছিল। তবে ভেতরের বেশিরভাগ নিম্ন মানের পন্যে সয়লাব। যাতে কর্তৃপক্ষের নজরদারী জরুরি।
শিমুলিয়ার বাসিন্দা মশিউর রুমি বলেন, শেষের দিকে ছাঁড়ের অপেক্ষা করে অনেকে মেলায় আসছে কম। তবে যারাই ঘুরতে এসেছেন তাদের মাঝে কেনা কাটার চেয়ে দরদাম হাঁকানো, ঘুরে দেখার মতো কাজেই ব্যস্ততা দেখা গেছে।
মেলার সহকারী পরিচালক ইপিবি জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কর্তৃপক্ষ এবারের মেলায় তরুণদের জন্যে বিনোদনসহ জুলাই আন্দোলনের চেতনায় ‘৩৬ জুলাই’ ও ‘তারুণ্যের বাংলাদেশ’ নামে কর্ণার রেখেছি। পাশাপাশি শুক্র ও শনিবার উন্মুক্ত বিনোদনে তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল। আশা করি পুরো মাস উৎসব মুখর থাকবে। পরবর্তী সব আয়োজনে স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তাসহ সারাদেশের উদ্যোক্তাদের মিলন মেলায় পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার টিম ও ম্যাজিস্টেটগণ নিয়োজিত আছেন। কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মেলা তথ্য কেন্দ্রসূত্রে জানা যায়, এবার প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ১০০টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ৮টি, জেনারেল স্টল, ফুডকোর্ট, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল প্রায় ১৭০টি। এছাড়া মূল প্যাভিলিয়নের বাইরে খোলা স্থানে আরও ১২-১৫টি ফুড স্টল রয়েছে। এবারও বাণিজ্য মেলায় ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বিদেশি ৮টি স্টলে তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। রপ্তানিতে দেশীয় পন্য উন্নত দেশের সাথে যোগাযোগ, সম্পর্ক আর প্রদশর্নের মূল উদ্দেশ্য সফল করতে কাজ করছি।
কেকে/এএম