বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫,
২৬ পৌষ ১৪৩১
বাংলা English

বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: পালিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাবেক ওসি শাহ আলম      শমী কায়সারের ব্যাংকের সবধরনের হিসাব তলব      যানজটের কারণে জনগণের কাছে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ      লেবাননের নতুন প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন      ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি      ভারতীয় জেলেদের সাথে দুর্ব্যবহারের তথ্য ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়      অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব জাতীয় নির্বাচন: সাইফুল হক      
গ্রামবাংলা
হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু
স্বপ্নপূরণের পথে থমকে যাওয়া উন্নয়ন, জনদুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তা
সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
প্রকাশ: সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:১৪ পিএম আপডেট: ০৬.০১.২০২৫ ৭:৫৫ পিএম  (ভিজিটর : ১০০)
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল তিস্তা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ, যা দুই উপজেলার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করবে। অবশেষে সৌদি সরকারের অর্থায়নে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। চীনের একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মের মাধ্যমে এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) এ প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করছে। প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকা সেতুটি চালু করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংলগ্ন ৯৬ মিটার দীর্ঘ আর্চ ব্রিজের অসমাপ্ত কাজ। এ ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় সেতুর উদ্বোধনও থমকে গেছে।

হরিপুর ইউনিয়নের মোড়ে নির্মিতব্য আর্চ ব্রিজটির জন্য ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর চট্টগ্রামের নিপা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৮২ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ব্রিজের কাজ ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।

এলজিইডির তত্ত্বাবধানে থাকা কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ করেনি। আর্চ রিব, হেঙ্গার বার ও ক্রস ব্রেসিংয়ের ঢালাই সম্পন্ন না করেই স্টেজিং সাপোর্ট সরিয়ে ফেলার কারণে ব্রিজের কিছু অংশে স্যাংগিং ডিফ্লেকশনের মতো মারাত্মক ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর সংশ্লিষ্ট কনসালটেন্ট জেভি অফ সিনিয়াম-ডিইউসিটি, চীন-বাংলাদেশ রেট্রোফিটিং কাজের নকশা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেটি বাস্তবায়নে গড়িমসি করে।

তিস্তা সেতুর জন্য আশায় বুক বেঁধেছিলেন দুই উপজেলার বাসিন্দারা। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, এই সেতুটি চালু হলে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে যেতো। কৃষিপণ্য দ্রুত বাজারে নেওয়া যেতো। কিন্তু এখন যে অবস্থা, তাতে মনে হয় আরও অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতু হলে আমরা সহজে কৃষিপণ্য বাজারে নিতে পারবো। এখন তো দেখছি সেতুর কাজ শেষ হলেও ৯৬ মিটার একটা ব্রিজের জন্য আটকে আছে। আমরা সাধারণ মানুষ কী আর এসব বুঝি? শুধু দেখছি বছর পার হয়, কাজ শেষ হয় না।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, সেতুর কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু ব্রিজের কারণে আটকে আছে। এইভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বপ্নই থেকে যাবে।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে মাল আনতে গেলে অনেক সময় লাগে। সেতু হলে দ্রুত মাল আনা-নেওয়া করতে পারতাম। কিন্তু এই ব্রিজের কাজের জন্য আমরা আরও কত দিন অপেক্ষা করবো, কেউ বলতে পারছে না।

হরিপুর ইউনিয়নের পাড়াসাদুয়া গ্রামের বাসিন্ধা আব্দুল মতিন বলেন, সেতু চালু হলে চিকিৎসা নিতে দ্রুত রংপুর যাওয়া যাবে। এখন শুনি ব্রিজের কাজ থেমে আছে। কবে শেষ হবে কেউ জানে না।

ব্রিজের কাজ স্থগিত থাকা এবং চুক্তি বাতিলের বিষয়ে সাবেক প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম প্রামাণিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলবো— এই বলে ফোন কেটে দেন।

সদ্য বদলি হওয়া উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের তাগিদ দেওয়ার কারণেই আমাকে বদলি হতে হয়েছে। ঠিকাদার কাজ করছে, সেটা দেখভাল করা আমার দায়িত্ব ছিল, কিন্তু প্রতিবাদ করায় আমাকেই সরানো হয়েছে।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, চুক্তি বাতিল করা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থে আবার কাজ শুরু করেছে। আমরা আশা করছি দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে।

২০২৪ সালের জুন মাসে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ চুক্তি বাতিল করলেও ডিসেম্বর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুনরায় কাজ শুরু করেছে। প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মালেক এ বিষয়ে বলেন, আমি চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলাম। এখন ঠিকাদার কীভাবে কাজ করছে, তা আমার জানা নেই।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, সেতুটির উদ্বোধন কবে হবে? জনমনে শঙ্কা, ব্রিজটির কাজ সঠিকভাবে না হলে এর স্থায়িত্ব নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়ায় একদিকে বাড়তি খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল এই সেতু, যা তাদের জীবনযাত্রায় গতি আনবে। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন থমকে আছে নানা অনিয়ম আর গাফিলতির জালে। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশাসনের গাফিলতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, জনগণের আস্থার সংকটও তৈরি করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেতুর উদ্বোধনের ব্যবস্থা করা।

জনগণের স্বার্থ রক্ষায় প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে এ ধরনের অনিয়ম বারবার ঘটবে, আর উন্নয়ন কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

কেকে/এএম








মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

পালিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাবেক ওসি শাহ আলম
শমী কায়সারের ব্যাংকের সবধরনের হিসাব তলব
হাত বাড়ালেই মিলছে বাণিজ্য মেলায় নিত্যপন্য
সিলেটে জুয়েলারি দোকান থেকে আড়াইশ ভরি স্বর্ণ চুরির অভিযোগ
যানজটের কারণে জনগণের কাছে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ

সর্বাধিক পঠিত

বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর, রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা
গঙ্গাচড়ায় বাংলাদেশ স্কাউটসের ত্রৈ-বার্ষিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত
লামায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার
মতলব উত্তরে বিএনপি নেতার মৃত্যুতে তানভীর হুদার শোক
তাড়াশ উপজেলা পরিষদ ভবনের ছাদে ইউএনও’র শখের বাগান ‘বিলকুঞ্জ’

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝