রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সুমাইয়া-রকিবুল দম্পত্তির ৯ মাস ২৮ দিনের একমাত্র ছেলে আদনানের গত মাসের ২৫ তারিখের পর থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। অবস্থার উন্নতি না হলে জানুয়ারির ৩ তারিখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে সরজমিনে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে পরিমাণের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বেডে জায়গা না পেয়ে অনেকে হাসপাতালের মেঝেতে চট কিংবা পাটি বিছিয়ে শুয়ে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর এলাকার ৪ বছর বয়সী শিশু আতিকুল ইসলাম নিউমোনিয়া সমস্যায় ভর্তি আছে ওয়ার্ডে। বেডে জায়গা না পেয়ে মেঝেতে শুয়েই তার চিকিৎসা চলছে।
ছেলের অবস্থা আগের চেয়ে একটু উন্নতি হয়েছে জানিয়ে আদনানের বাবা রকিবুল ইসলাম বলেন, ছোট বাচ্চা, আমরা বুঝতে পারিনি ঠান্ডা লেগে গেছে। প্রথমদিকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছিল। গ্রামের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়েছিলাম, তারপরও ভালো হয়নি। পরে পাতলা পায়খানা থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়। অবস্থা ভালো না দেখে ছেলেকে নিয়ে মেডিকেলে আসি। ৩ দিন থেকে চিকিৎসা চলছে, আলহামদুল্লিাহ্ আমার ছেলে এখন একটু সুস্থ আছে।
আদনানের মতোই রামেক হাসপাতালে জানুয়ারি মাসের ১ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত জ¦র, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৪৯৪ জন রোগী। তাদের ভিতরে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গড়ে শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১২০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ১২০০ শয্যার বিপরীতে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে প্রায় ৩ হাজার। এতো সংখ্যক রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের।
আতিকুল ইসলামের মা সানজিদা ইসলাম বলেন, হামার ছেলির ঠান্ডা লেগি বসি গেছ। জ্বর ভালো না হওয়ায় হামরা হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন শুনছি তার নাকি নিউমোনিয়া হয়ে গেছ। এখন চিকিৎসা তো চলছে বাবা, আল্লার কাছে দোয়া করি যাতে দ্রুত ভালো হয়।
রাজশাহী ও আশেপাশের এলাকায় মাঝারি ঘন কুয়াশা, রাতে ও সকালে কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জনজীবনে ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে। শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর ভিড় বাড়ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, চলতি শীতে ঠান্ডাজনিত কারণে রামেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। বেশিরভাগ রোগী কোল্ড ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।
ডা. শংকর আরও জানান, শীতে রোগীদের কথা বিবেচনা করে হাসপাতালে ওয়ার্ডগুলোতে বাইরের ঠান্ডা বাতাস প্রতিরোধের জন্য খোলা বারান্দায় পর্দা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নিবুলাইজারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে। শীতজনিত কারণে ভর্তি শিশুদের জন্য শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তারা শীতজনিত রোগে ভর্তি রোগীর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষায় কী করণীয়, জানতে চাইলে ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, এই শীতে বাচ্চা ও বয়স্কদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে বের হলে নাক, কান ও গলার জন্যও শীত বস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। গরম খাবার খেতে হবে। গরম পানি খেতে হবে ও ব্যবহার করতে হবে। আগুন পোহানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শরীরে আগুন না লাগে। কাঁচা খেজুর রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নিপাহ থেকে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
কেকে/এএম