বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)-এর ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিচিত মুখ মধু নামক কুকুরটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। কেউ তার নাম ধরে ডাকলেই কাছে ছুটে আসে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায়ই মেতে ওঠে খুনসুটিতে। তার মায়াবী চাহনি মুহূর্তেই যে কারও মন জয় করে নিতে পারে। মধু ঠিক কবে থেকে বুটেক্সে আছে বা তার বয়স সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি, তবে সবার মতে দীর্ঘদিন ধরেই বুটেক্সে মধুর বিচরণ রয়েছে। কুকুরটির গায়ের রং হালকা বাদামী। তার সুস্বাস্থ্য এবং মিশুক স্বভাব জানান দেয় যে ক্যাম্পাসের সবার কাছ থেকে সে যথেষ্ট ভালোবাসা এবং যত্ন পায়।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী টেকনিক্যাল অফিসার মো. এনামুল হক বলেন, মধু মূলত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী নিজাম ভাইয়ের কুকুর। তার ৫টি কুকুর ছিল, যার মধ্যে একটি ছিল মধু। তার গায়ের রঙের জন্য আমরা তাকে নৌবাহিনী বলে ডাকতাম। পরে সে মধু নামে পরিচিতি পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক এবং সবাইকে সে চিনতে পারে। প্রথমদিকে বাইরের লোকজনদের তাড়া করলেও এখন আর করে না।
ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ইশফাক আলম মাহি বলেন, মধুকে প্রায় ১ বছর ধরে চিনি এবং তার সঙ্গে আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তার নাম ধরে ডাকলেই কাছে চলে আসে। মাঝে মাঝে যখন বন্ধুরা মিলে রাতে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে আসি, মধু আমাদের দেখলে পাশে এসে বসে।
একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, মধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে কীভাবে যেন চেনে। ঘ্রাণ শুকেই বুঝতে পারে। তেমনি বাইরের কেউ এলে সেটাও বুঝতে পারে এবং তখন একটু ঘেউ ঘেউ করে, তবে কাউকে কামড়ায় না।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সারোয়ার হোসেন সামি বলেন, মধুর ব্যাপারে আমার বিশেষ স্মৃতি হলো জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার। আমরা ক্যাম্পাসে যাই ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে। ওই দিনের শুরুর ঘটনাই মধুকে ঘিরে। ক্যাম্পাসে মধু ঠিকই প্রবেশ করতে পারে, তবে ছাত্রলীগ পারবে না। মধুর মধ্যেও মানবিকবোধ রয়েছে, যা ছাত্রলীগের মধ্যে নেই—এই ঘটনাই সেটি প্রমাণ করে।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী নাজরানা মেহনাজ দিবা বলেন, মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে রাতে প্রোগ্রাম থাকে, এবং প্রোগ্রাম শেষ করে হলে যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যায়। তখন মধু আমাদের সঙ্গে সঙ্গে যায় এবং আমাদের হল পর্যন্ত এগিয়ে দেয়, যাতে পথে কোনো বিপদ না হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, যেহেতু কুকুরটি সব সময় ক্যাম্পাসে থাকে, তাই প্রতিদিন তার খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত।
ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে ক্যান্টিন কিংবা আশপাশের টং দোকানও বন্ধ থাকে, ফলে মধুর খাবারের কষ্ট হয়। এই বন্ধকালীন সময়ে যেন মধুর খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, এমনটাই প্রত্যাশা বুটেক্স শিক্ষার্থীদের।
কেকে/এএম