বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫,
২৬ পৌষ ১৪৩১
বাংলা English

বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: সোহান ঝড়ে রংপুরের উড়ন্ত জয়      তুরস্ক উৎপাদন ও সেবা খাতে বিনিয়োগ করতে চায়: বাণিজ্য উপদেষ্টা      খালেদা জিয়ার আপিলের রায় ১৪ জানুয়ারি      নিক্সন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৩১৬২ কোটি টাকা লেনদেন      তিন জেলায় নতুন ডিসি      ‘বিসিএসে বাদ পড়া বেশিরভাগই চাকরিতে যোগ দিতে পারবে’      পুড়িয়ে দিয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের আদালত, বিচার কার্যক্রম বন্ধ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যেন দুর্নীতির ‘মহাসাগর’
শিপার মাহমুদ
প্রকাশ: বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪:০৪ পিএম আপডেট: ০৮.০১.২০২৫ ৪:৩৭ পিএম  (ভিজিটর : ৫৭)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতির ‘মহাসাগরে’ রূপ নিয়েছে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিগত কয়েক বছর ধরে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম ও অভিযোগে জর্জরিত। শিক্ষার্থীরা বারবার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আন্দোলন করলেও কার্যত কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তার একক ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এসব অভিযোগ এতদিন ধামাচাপা দিয়ে আসছিলেন।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়টির সামনেও এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও গতকাল স্থায়ী ক্যাম্পাস ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি স্মারকলিপি জমা দেন। এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

২০০৫ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও দুই দশকেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আর এসব অভিযোগে অতিসম্প্রতি বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে চার সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল ভেতরে প্রবেশ করেন। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। বাইরে অপেক্ষা করছিলেন শতাধিক শিক্ষার্থী। অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরাই পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পাহাড়সম দুর্নীতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এতে তারা অভিযোগ করেন-২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নজরুল ইসলাম অবৈধভাবে ও জোরপূর্বক বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের পদ দখল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে বালু ভরাটের নামে ৬২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীরা জানান-২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে ইউনিয়ন ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে নজরুল ইসলাম দাবি করেন- তিনি এ টাকা তিনি দান করেছেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তিনি (নজরুল ইসলাম) কোনো টাকাই ডোনেট করেননি।  

তাদের অভিযোগ ২০১১ সালে নজরুল ইসলাম ফারিস্ট ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান থাকাকালে সাবেক বিওটি চেয়ারম্যান এম এ খালেককে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ৫১ কোটি টাকার ঋণ দেন। যা সুদে-আসলে এখন ৩০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এ অর্থের কোনো হিসাব নেই। এ ছাড়াও নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ৩৯০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা নিজের ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয় ২০১৯ সালে নজরুল ইসলাম ৩১ লাখ টাকার গাড়ি ৪৪ লাখ টাকায় ক্রয় দেখান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি এটি স্পষ্টতই দুর্নীতি। এর বাইরেও এইচআরবি টাওয়ারের ভাড়ার শর্ত ভঙ্গ করে ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হয় এবং গ্রাউন্ড ফ্লোর তৃতীয় পক্ষকে ভাড়া দিয়ে নজরুল ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন বলেও তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে ৮ কোটি টাকার ভ্যাট-ট্যাক্স সংগ্রহ করে বিওটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তা সরকারি খাতে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ ও নিজের মামলার খরচ চালাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়সহ ১০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা অদৃশ্য খরচ করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ৮৬ লাখ টাকা উত্তোলন ও স্টার টাওয়ারে ক্যাফে উন্নয়নের নামে ১৩ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। 

এদিকে শিক্ষার্থীরা এসব অনিয়ম ও অভিযোগে বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে অবিলম্বে অপসারণ, দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর, নিরপেক্ষ প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা ও বৈধ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠনসহ দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দাবিও জানিয়েছেন। ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী আজ চরম অনিশ্চয়তার মুখে। তারা যেন অবিলম্বে এই দুর্নীতিবাজ বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে অপসারণ করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করেন।’

জমি ক্রয়ের এক যুগেও হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস : ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় করা হলেও দীর্ঘ ১২ বছরেও সেই ক্যাম্পাস বাস্তবায়িত হয়নি। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসগুলো নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন -বনানীর ৬ তলা বিশিষ্ট টেক্সটাইল বিল্ডিং ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং স্টার টাওয়ারের ভাড়া চুক্তির মেয়াদ ২০২৫ সালের জুনে শেষ হতে যাচ্ছে। এইচআরবি টাওয়ারেও এক বছরের ভাড়া বকেয়া রয়েছে।

অব্যবস্থাপনা ও সংকটময় পরিস্থিতি : শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টে ল্যাব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।  ক্লাসরুম সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও প্রশাসন কোনো সমাধান দেয়নি। এমনকি শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বিভিন্ন হুমকি-ধমকির শিকার হন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ। আপনারা ইনভেস্টিগেসন করেন; ট্রুলি ইনভেস্টিগেসন করেন। আমি এসব কোনো কিছুই করিনি। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়েছি, খবর নিয়ে দেখেন।’  

এ বিষয়ে জানতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. ইফ্ফাত জাহান বলেন, ‘এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে এখন কিছু বলার নাই। আন্দোলন চলছে, চলবে।’ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কতটুকু জানেন জানতে চাইলে খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না, এগুলো ছেলে-মেয়েরা বের করেছে, তাদের কাছে তথ্য আছে। আমার কাছে কোনো তথ্য নাই।’

সার্বিক বিষয়ে কথা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ খোলা কাগজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টির চলমান সংকট নিয়ে শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিল। তারা বিষয়টি আমাকে অবগত করে গেছে। এ সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি। যদি কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হয় অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কেকে/এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়   বোর্ড অব ট্রাস্টিজ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সোহান ঝড়ে রংপুরের উড়ন্ত জয়
তুরস্ক উৎপাদন ও সেবা খাতে বিনিয়োগ করতে চায়: বাণিজ্য উপদেষ্টা
গঙ্গাচড়ায় বাংলাদেশ স্কাউটসের ত্রৈ-বার্ষিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত
খালেদা জিয়ার আপিলের রায় ১৪ জানুয়ারি
রুয়েটে দুই কর্মকর্তার কক্ষে তালা, এক শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

সর্বাধিক পঠিত

বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর, রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা
শাবির ছাত্রহলে সংঘঠিত ঘটনার তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন
বিএনপির দু’গ্রুপের সংর্ঘষে ৮ বাড়ীতে আগুন, আহত ২০
উত্তেজনা বাড়াচ্ছে ভারত কঠোর অবস্থানে বিজিবি
তাড়াশ উপজেলা পরিষদ ভবনের ছাদে ইউএনও’র শখের বাগান ‘বিলকুঞ্জ’

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝