ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ৪টি ভেজাল গুড়ের কারখানায় তৈরী ‘বিষাক্ত গুড়’ চাহিদা মেটাচ্ছে বাঞ্ছারামপুরসহ হোমনা, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লাসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা। গুড়ের নামে বিষ উৎপাদন হচ্ছে অনেকটা প্রকাশ্যে। প্রতিদিন কারখানাগুলো থেকে লাখ লাখ টাকার ভেজাল গুড় তৈরির পর তা সারাদেশে বিক্রির জন্য পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সারা দেশে আখের গুড়ের চাহিদা বাড়ায় বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বাজারে ভেজাল গুড়ের কারখানা গুলোতে গুড় উৎপাদনের নামে বিষ তৈরি হচ্ছে। অধিক লাভের আশায় একটি সিন্ডিকেট চক্র বহুদিন ধরে এই গুড় তৈরী করে আসছে। শীত মৌসুমে গুড়ের চাহিদা থাকে বেশী। শীতের মৌসুম পড়ার সাথে সাথে ভেজাল গুড় তৈরীতে মহোৎসবের মতো মেতে উঠে উৎপাদনকারীরা।
জানা গেছে, বিষয়টি প্রকাশ্যে তৈরী করলেও সাম্প্রতিক সময়ে উজানচরে ভ্রাম্যমান আদালতের কোন অভিযান বা প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে, প্রতিনিয়ত ভেজাল এবং নোংরা পরিবেশে গুড় তৈরী করে বাজারজাত করছে গুড় উৎপাদনকারীরা। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছে সাধারণ মানুষ।
ভেজাল গুড় তৈরি করছে এমন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুড় উৎপাদনকারীরা কয়েকটি কারখানায় বাজার থেকে কিনে আনা নিন্মমানের গুড়গুলো ময়লাযুক্ত মেঝেতে নোংরা স্যান্ডেল পায়ে শ্রমিকরা গুড়ো করেন। পাশেই প্রকাশ্যে রাখা হয় চিনির বস্তা। দিনভর ক্ষতিকর বিষাক্ত হাইড্রোজ আর কেমিকেল মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব করছে স্থানীয় সেলিম, খোকন, মিজান, ড্রেজার বাবুল সহ অতি প্রভাবশালী ব্যক্তির সিন্ডিকেট ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি এই প্রতিনিধিকে জানান, এলাকার অন্তত ১০জনের একটি সিন্ডিকেট অসাধু ব্যবসায়ী কারখানা খুলে হাজার হাজার মন ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। তারা বাজার থেকে কমদামে নিন্মমানের ঝোলা ও নরম গুড় কিনে, গলিয়ে তাতে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি, পাথরচুন ও বিশেষ গাছের ছাল গুড়া দিয়ে গুড় তৈরি করছেন। সেই গুড় স্থানীয় হাট-বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাক ভরে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা.নাইমুর রহমান জানান,গুড়ে চিনি, রং,হাইড্রোজ, সোডা,ফিটকারির মত ভেজাল মিশ্রণের কারনে খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, কিডনী ড্যামেজ, লিভারে ক্ষতি হওয়ার সম্ভানা থাকে।
বাঞ্ছারামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী রিয়াজুল ইসলাম ভোক্তা হিসেবে বলেন, ‘আমরা কেনার সময় ভেজাল গুড় চিনতে পারলেও কোন কিছু করার থাকেনা। কারন চিনি মিশ্রিত ব্যাতীত স্বচ্ছ ভালো গুড় পাওয়া অত্যান্ত দুস্কর।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন,"আমি কয়েকমাস আগে একবার অভিযান চালিয়ে ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা দেখে ও প্রমাণ পেয়ে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করি। এরা একটা 'শক্তিশালী সিন্ডিকেট' বলে খবর পেয়েছি। যেহেতু, আবারো ভেজাল গুড় তৈরি করার অভিযোগ আসছে, প্রশাসন আবারো ভেজালগুড় তৈরির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নেবে।"
কেকে/এআর