বিদ্যুৎ না থাকলেও মিটারে বেশি বিল আসার কারণ জানাল বিএন্ডটি মিটার লিমিটেড। মিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যুৎ না থাকলেও পালস দেওয়া, বেশি বিল আসা, মিটার বেশি নষ্ট হওয়া, নিম্নমানের/মানহীন মিটার ক্রয়, দুর্নীতির মাধ্যমে মিটার ক্রয় করাসহ বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিএন্ডটি মিটার কর্তৃপক্ষ গুলশানের আমারি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএন্ডটি মিটার লিমিটেডের ডিরেক্টর মো. হাবিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বছরে মিটার নষ্টের পরিমাণ, প্রিপেইড মিটার সংক্রান্ত ও বর্তমান প্রিপেইড মিটার কি ধরনের সমস্যা ও গ্রাহক ভোগান্তি তৈরি করছে এবং গ্রাহক সরাসরি খোলা বাজার হতে মিটার কিনলে এর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং টেম্পারিংয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়।
পালস দেওয়া ও বিদ্যুৎ না থাকলে পালস দেওয়ার কারণ : মিটারের মধ্যে বাতি জ্বলা বা ইমপালস লাইট থাকার কারণ মিটারের এ্যকুরেসি, সক্ষমতা বাহ্যিক ভাবে পরিমাপ করার একটি ব্যবস্থা থাকা। এটিই একমাত্র প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মিটার সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা যাচাই করা হয়। তবে আমাদের এই মিটারের এই ইমপালস লাইটের আরো একটি গুরুত্বপূর্ন ফিচার বা বৈশিষ্ট রয়েছে। যা হল মিটারটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে সিগনাল দেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় যে কোন সমস্যা যুক্ত মিটার অনিয়ন্ত্রিত পালস দেয় যার মাধ্যমে ধারনা করা যায় মিটারটিতে সমস্যা হয়েছে।
এই সিস্টেমটি রাখা হয়েছে কারণ বিদ্যুৎ না থাকলেও পালস দেয়। মিটারের অনিয়ন্ত্রিত পালস দেওয়া সাধারণত বোঝা যায় যখন বিদ্যুৎ না থাকে। কেননা আমরা সাধারনত অন্য সময় মিটারের দিকে লক্ষ্য করি না। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেলে কোন আলো জ্বললে তা সহজেই চোখে পড়ে। এর ফলে মিটারের সমস্যা সম্পর্কে পল্লী বিদ্যুৎ কে অবহিত করতে পারে।
বেশি বিল আসা : মিটারের ব্যবহারের চেয়ে বিদুৎ বিল বেশি আসা সম্ভব না যদি মিটার ঠিক থাকে। তবে আগের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল আসার ধারনাই বর্তমান গ্রাহকের মাঝে রয়েছে। বিগত সরকারের সময় বিদ্যুতের দাম অনেকবার বৃদ্ধি করা হয়েছে গ্রাহক অনেক ক্ষেত্রে জানেইনা যে কত বেশি বাড়ানো হয়েছে। আবার শীত ও গীস্মের সময় ব্যবহারের পরিবর্তনের কারনে বৈদ্যুতিক বিলের পরিবর্তন দেখা যায়। তাছাড়াও বৈদ্যুতিক জিনিসের ব্যবহারের হারও অনেক অংশে বেড়েছে যার কারণে সাঠিক বিল আসলেও তাকে বেশি মনে করা হচ্ছে।
মিটার নষ্ট হওয়ার পরিমান বেশি কেন বা নষ্ট হওয়ার হার বেশি: নষ্ট হওয়ার পরিমান বেশি বা কম তা সম্পূর্নভাবে নির্ভর করে মোট মিটারের সংখ্যার উপর। বিআরইবি এর আওতাধীন ৮০ পবিস এর গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখ যার ১ শতাংশ হল ৩ লাখ ৬০ হাজার যা সংখ্যার বিচারে অনেক বড় হলেও হার হিসেবে তুলনা হলে খুবই কম।
মিটার নষ্ট হওয়ার বড় একটি কারন বজ্রপাতের হার বেড়ে যাওয়া। বর্তমানে বজ্রপাতের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই মিটার পুড়ে যাওয়ার হারও বেড়ে গেছে। সাধারনত পল্লী বিদ্যুৎ এর সংযোগ গ্রাহক প্রান্তে আসার আগে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন থেকে দীর্ঘ দুরত্ব অতিক্রম করে যার কারণে লাইনের উপর বজ্রপাত পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং তারের উপর বজ্রপাত পড়লে আশে পাশের সব মিটার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া মিটারের গ্রাউন্ডিং কানেকশন সঠিক ভাবে না থাকার কারণে এই সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে।
মানহীন মিটার ক্রয়: নিম্ন বা উচ্চ মানের মিটার শব্দটি অস্পষ্ট শব্দ। মিটারটি বিআরইবি নির্ধারিত টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এরমত তৈরি কিনা সেটা বিবেচ্য। যদি মিটার নষ্টের হার বেশি হয় তবে মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। আমাদের মিটার নষ্ট হওয়ার হার ১.৫ শতাংশের বেশি নয়। বিগত তিন বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোন বাংলাদেশি মিটার প্রস্তুতকারীর মিটার নষ্টের হার ৩ শতাংশের বেশি নয়। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিআরইবি প্রায় ১৫ লাখ মিটার ক্রয় করে যেখানে গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে তিন কোটির বেশি। যদি অনেক মিটার নষ্ট হত তবে বিআরইবি ন্যূনতম ১০-১৫ শতাংশ সর্বনিম্ন প্রায় ৪০ থেকে ৬০ লাখ মিটার ক্রয় করতে হত শুধু নষ্ট মিটার পরিবর্তন করার জন্য। এর পাশাপাশি নতুন কানেকশনের জন্য ক্রয় করতে হত আরো কয়েক লাখ।
দুর্নীতির মাধ্যমে মিটার ক্রয় করা: খোলা বাজারে যে সকল মিটার পাওয়া যায় তা বিআরইবি এর টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন সাপোর্ট করে না তার পরেও সে সকল মিটারের মূল্য আমাদের ওপেন টেন্ডরের মাধ্যমে সরবরাহকৃত মিটারের মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী। মধ্যম আয়ের গ্রাহকের জন্য বিআরইবি এ রকম মিটার না ক্রয় করে লোকাল বাজার থেকে গ্রাহককে মিটার ক্রয় করতে দিলে মধ্যম আয়ের গ্রাহকের খরচ আরো বাড়ত।
কেকে/এজে