শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫,
২৭ পৌষ ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: পলাতক ওসি শাহ আলমকে গ্রেফতারে সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি      ক্ষমতার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় বাড়ছে রাজনৈতিক অনৈক্য      বাড়তি ব্যয় চাপছে ভোক্তার ঘাড়ে, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরাও      পালিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাবেক ওসি শাহ আলম      শমী কায়সারের ব্যাংকের সবধরনের হিসাব তলব      যানজটের কারণে জনগণের কাছে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ      লেবাননের নতুন প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ক্ষমতার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় বাড়ছে রাজনৈতিক অনৈক্য
রোকন উদ্দিন
প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০:৪২ এএম  (ভিজিটর : ৩৯)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা সব সময় থাকে। এমন প্রতিযোগিতা থাকাই স্বাভাবিক বলে মনে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে দলগুলোর মধ্যে বাড়ছে রাজনৈতিক অনৈক্য। এদিকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কি দুর্ভাগ্য আমাদের, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে কেন জানি আমরা নিজেদের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছি না। ঐক্যের জায়গাটাতে থাকতে পারছি না। কি দুর্ভাগ্য, এখন যেটা শুরু হয়েছে, এটা কিন্তু এতটুকু সুস্থ ব্যাপার না। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। ক্ষমতা তো তখনই টিকে থাকবে যখন সেটাকে স্থির করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার অবশ্যই লাগবে। আর সংস্কারে পেছনে যে শক্তিটা লাগবে, সেটা একটা হচ্ছে নির্বাচিত পার্লামেন্ট, নির্বাচিত সরকার। এটা ছাড়া সংস্কারকে লেজিটিমিসি বা বৈধতা দিতে পারব না আমরা। তাই আমরা সেসব বিতর্কে জড়াতে চাই না।’  সব পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মীদের বিভাজন সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু মানুষ যেন বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা দেশকে ভাগ করবে আবার জনগণকে বিভক্ত করবে। এমন বিভিন্ন রকম কথা বলছে, বিভিন্ন রকম উসকানি দিচ্ছে। আপনারা দয়া করে এগুলোর মধ্যে যাবেন না।’

ছাত্রদের নতুন দল, টার্গেট কি ক্ষমতা?

জাতীয় নাগরিক কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা যাচ্ছে, শুরুতে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যেই রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্য ছিল। তবে নানা জটিলতায় সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নতুন করে দল গঠনের সম্ভাব্য সময়সীমা ধরা হয়েছে ফেব্রুয়ারি। দলটির নেতারাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘দুয়েক মাসের মধ্যেই’ রাজনৈতিক দল আসবে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ইতোমধ্যেই তারা সারা দেশে প্রায় শখানেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন। নাগরিক কমিটি মনে করছে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির ধারার বাইরে নতুন দলের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এছাড়া সম্ভাব্য নতুন দলটিকে গুছিয়ে ওঠার সুযোগ দিতে নির্বাচনে বিলম্ব করা হচ্ছে কি না এমন আলোচনাও আছে রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন দল কি আদৌ নির্বাচনে অংশ নেবে? নিলে উদ্দেশ্য কী? এ প্রসঙ্গে সামান্তা শারমিন জানান, তাদের দল অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে।

রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ, বৈষম্যবিরোধীদের কর্মসূচি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনা করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর গত পাঁচ মাসে নির্বাচন, সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে বারবার উত্তাপ ও অনৈক্য দেখা গেছে রাজনীতির মাঠে। নতুন করে মাঠ গরম হয়ে উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ পাঠ কর্মসূচি এবং প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতাদের বাগযুদ্ধ ঘিরে।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধীরা জানান, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন তারা। এর মধ্য দিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ‘কবর’ রচনা করা এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

এদিকে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান না জানালেও এ বিষয়ে দলগুলোর কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তা না করে হঠাৎ কোনো ঘোষণা বিভাজন তৈরির আশঙ্কা থাকে। অবশ্য কোনো কোনো দল এরই মধ্যে ছাত্রদের ওই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থনও দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জোটে থাকা দলগুলো বাদে বাকি সব দলের নেতাদের শহিদ মিনারের এ কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, যখন বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন, তখন বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করাসহ বিভিন্ন বক্তব্য এবং এ ধরনের উদ্যোগ অনাস্থা-বিভেদ বাড়াবে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমরা মনে করি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগেই দেওয়া উচিত ছিল এবং তা সবাই মিলে। তারা (ছাত্ররা) যেন সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেই এটি করে। যদিও শেষ সময়ে উদ্যোগ নিয়েছে তবুও চূড়ান্ত ডকুমেন্টেশন সবাইকে নিয়ে করা উচিত।

বিএনপি-জামায়াতের অনৈক্য

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর হাত ধরে চলার ইতিহাস ৪৬ বছরের পুরোনো আর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক প্রায় দুই যুগের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির ফাঁকা মাঠে নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসেবে হাজির করতে চাইছে জামায়াত। একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র বিএনপিকে এড়িয়ে নানা ইস্যুতে অবস্থান নিতে দেখা গেছে দলটির শীর্ষ নেতাদের। দিন যত যাচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব তত বাড়ছে। বিএনপিও দূরত্ব ঘোচানোর চিন্তা বাদ দিয়ে অন্যান্য দল নিয়ে এগোতে চাইছে।

বিএনপির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আলোচনা করেছেন নীতিনির্ধারকরা। নেতারা বলেছেন, জামায়াত বিএনপির কৌশলগত মিত্র ছিল। জোট বিলুপ্ত হওয়ার পর সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনেও জামায়াত বিএনপির সঙ্গে ছিল। হাসিনার পতন হয়েছে। দৃশ্যত জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতি এখন এক নয়। একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আরেকটা রাজনৈতিক দলের যে সম্পর্ক থাকে, এখন দল দুটির সম্পর্ক সে রকমই।

জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বনিবনা হওয়ার সম্ভাবনা কম এটা ধরে নিয়েই জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা ইসলামপন্থিদের সঙ্গে নির্বাচনি ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছেন।

বিএনপি-জামায়াত বাগযুদ্ধ

সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শুধু পার্শ্ববর্তী দেশই অপপ্রচার করছে না, দেশের দু-একটি রাজনৈতিক দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। শেখ হাসিনার আমলে যারা লুট করেছে, সেই এস আলমদের উত্তরসূরি হয়ে ব্যাংক দখল করেছে অনেকে। বড় বড় কথা বলে বিএনপির নামে কলঙ্ক লেপন করছে। ওই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বিবৃতিতে বলেন, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধু তাই নয়, রিজভীর এ জাতীয় বক্তব্য কয়েক দশক ধরে প্রচার করা হচ্ছে। রগ কাটা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার, ৭১-এর বিরোধিতা-এসব বক্তব্য জনগণ বহু আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে।

রাজনৈতিক অনৈক্য হতে পারে গণহত্যার বিচারে বড় বাধা

জুলাই গণহত্যার বিচারে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে রাজনৈতিক অনৈক্য। এর সুযোগ নেবে গুম ও খুনে জড়িতরা। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘গুম-খুন থেকে জুলাই গণহত্যা : বিচারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংলাপে এ মত উঠে আসে। বক্তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম, খুন ও গণহত্যার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক ঐক্য খুবই জরুরি।
আরও সংবাদ   বিষয়:  রাজনৈতিক অনৈক্য   ক্ষমতার অসুস্থ প্রতিযোগিতা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

কুমিল্লায় ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ২
জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রে আলেমদের অবদান উল্লেখ থাকতে হবে: আতাউর রহমান
শাবিপ্রবির চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ধ্রুব, সম্পাদক শান
পলাতক ওসি শাহ আলমকে গ্রেফতারে সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি
জাল টাকার নোট দিয়ে পান-সিগারেট কিনতে গিয়ে আটক যুবক

সর্বাধিক পঠিত

নিপুণকে সিলেট বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল পুলিশ
পালিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাবেক ওসি শাহ আলম
লামায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার
জাল টাকার নোট দিয়ে পান-সিগারেট কিনতে গিয়ে আটক যুবক
বিদ্যুৎ না থাকলেও মিটারে বেশি বিল আসার কারণ জানাল বিএন্ডটি

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝