মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে ৬ জন। হতাহতরা সবাই কুখ্যাত নৌডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলো গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাত দশটার দিকে মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাতরা সবাই নৌডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলো। নিহতদের মধ্যে ওদুদ বেপারি নৌডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করত কুখ্যাত নৌডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্য বার অভিযান পরিচালনা করেও অবৈধ এই বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি। সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৩/৪টি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এই বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের দাবি শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিন চালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিলো নয়ন বাহিনীর লোকজন। এসময় নৌযান দুটিতে ১০/১১ জন আরোহী ছিলো। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিকভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম(২৫) নামে একজন নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তীতে শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএ'র উপ-পরিচালক মোঃ ওবায়দুল করিম খান বলেন, শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা ধারণা যারা মারা গেছে তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিলো। এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিলো। উদ্ধার অভিযানের এক পর্যায়ে শনিবার দুপুর ২ টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা'।
তবে নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয় পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয় এবং আহত হয় ৫/৬জন'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, 'ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৪জন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব'।
কেকে/এমএস