চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জনপদগুলো ছিল গ্রামীণ মেলা ও লোকজ সংষ্কৃতিতে ভরপুর। জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে নিরক্ষরতার চাপ ছিল বেশী। কিন্তু গ্রামীণ মেলা ও সাংষ্কৃতিক অঙ্গন ছিল স্বাদ-রূপ-রস-গন্ধে ভরাপুর। আর্থিক দুঃখ-দৈন্যতাকে তুচ্ছ মনে করে মন-মানসিকতার অমৃত সুধায় সমাজ জীবন ও সামাজিক পরিবেশেকে প্রাধান্য দিয়ে জীবন অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে লোকজ সংষ্কৃতি ও গ্রাম্যমেলা থেকে মানুষ কখনো পিছপা হননি।
কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে প্রাচীন নিদর্শন আমিরাবাদের বড় মাওলানার ঘোড়দৌঁড় মেলা, বড়হাতিয়ার বায়তুশ শরফের দ্বীনি সভা, চুনতির ১৯ দিন ব্যাপী সীরত (সঃ) মাহফিল, পদুয়ার পেঠান শাহের ওরশ শরীফ, লোহাগাড়ার শাহপীর আউলিয়ার ওরশ শরীফ, পদুয়া ও কলাউজানের ক্ষেত্রপাল এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব প্রভৃতি।
প্রতিটা উৎসব ছিল স্ব-স্ব ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক প্রকার আনন্দঘন মিলন মেলা। এ সব উৎসবে ছিল অসংখ্য দর্শনার্থীদের প্রচন্ড ভীড়। ওই পরিবেশ আজো লেগে আছে কোন কোন ক্ষেত্রে। বড়হাতিয়া ইউনিয়নের প্রবীণ ব্যক্তি মোঃ শফি ও আধুনগর ইউনিয়নের প্রবীণ রাজনীতিক ফরিদ উদ্দীন এবং আমিরাবাদ ইউনিয়নের প্রবীণ শিক্ষাবিদ মোবারক আলী পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রাচীন কালের গ্রামীণ মানুষেরা ছিলেন সহজ ও সরল প্রকৃতির। তাঁরা ছিলেন উদারমনা। তাঁদের মনে কোন কুটিল বুদ্ধি ছিলনা।
ওইসব লোকজ সংষ্কৃতি ও গ্রামীণ মেলা তাঁদের সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস ছিল। নির্মল গ্রামীণ পরিবেশে তাঁরা অতি সাদাসিদেভাবে জীবন-যাপন করতেন। আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। একই সাথে পরিবর্তন হয় মানুষের মন-মানসিকতা ও রুচির। ফলে, প্রাচীন কালের গ্রামীণ মেলা ও লোকজ সংষ্কৃতির উপর ধস নেমেছে। ধার করা বিভিন্ন অপসংষ্কৃতি স্থান দখল করে নেয় বলে এলাকা পরিদর্শনকালে বিভিন্ন প্রবীণ ব্যক্তি জানিয়েছেন।
কালের আবর্তন বিবর্তন ও পরিবর্তনে অত্র উপজেলার জনপদ থেকে হারিয়ে গেছে প্রাচীন ঐতিহ্য গ্রামীণ মেলা ও লোকজ সংষ্কৃতি। রূপ-রস-স্বাদ ও গন্ধবিহীন অপসংস্কৃতির করাল গ্রাসে ওইসব গ্রামীণ লোকজ সংষ্কৃতি হারিয়ে গেছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
কেকে/এআর