প্রকাশ: শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:৫৫ পিএম (ভিজিটর : ৪৪)
ছবি: প্রতিনিধি
দিনাজপুরের খানসামায় দিন দিন বেড়ে চলেছে খড়ের দাম। এর ফলে কৃষকরা খুশি হলেও খামাড়িরা বিপাকে পড়েছেন। চলতি মৌসুমে ধান কেটে গোলায় তোলার পর অবশিষ্ট ধান ও খড় বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তবে খামারিরা অভিযোগ করছেন, খড়ের দাম এতটা বেড়ে যাওয়ায় তাদের খামারের ব্যয় বহন করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে বাজারে খড়ের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে ১০০ আঁটি (খড়) বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় এবং ১ হাজার আঁটি (খড়) বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এতে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন, তবে খামারি-মালিকরা এই উচ্চমূল্যের কারণে তাদের খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, ভরা মৌসুমে খড়ের দাম এমন লাগামহীন ছিল না।
খামারিরা বলছেন, আগে ভরা মৌসুমে খড়ের দাম ছিল ১ থেকে ২ টাকা প্রতি আঁটি। কিন্তু বর্তমানে ওই একই আঁটি কিনতে হচ্ছে ৬ থেকে ৭ টাকায়। কয়েক দিনের মধ্যে এটি ৮ টাকায় পৌঁছাবে বলেও ধারণা করছেন তারা। শুধু খড়ের দাম নয়, দানাদার খাদ্য যেমন ভুসি, চালের গুঁড়া ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে। এতে করে খামারিদের জন্য গোখাদ্য কেনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, ধানের খড় গরুর জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। গুঁড়া-ভুসির সঙ্গে খড় কেটে ভিজিয়ে রেখে গরুকে খাওয়ানো হয়। গরুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য এই খাদ্য অপরিহার্য। তাই খামারিরা সারা বছর খড় সংগ্রহ করেন। কিন্তু বর্তমানে খড়ের সংকট ও দাম বাড়ার কারণে তাদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে।
খানসামার সুবর্ণখুলী গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম (৩৮ ) বলেন, ‘আমার গোয়ালে দুইটি বড় গরু এবং একটি বাছুর রয়েছে। প্রতিদিন গরুর জন্য যে পরিমাণ খড় ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের প্রয়োজন, তা কিনতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। এভাবে খরচ বহন করা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ছে। খড়ের দাম এত বেশি যে, আমরা এখন গরু রাখাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছি, আবার বিক্রিও করতে পারছি না।’ কাঁচা ঘাস নেই এবং খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই দানাদার খাদ্য যেমন ভুসি ও চালের গুঁড়া কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সেগুলোর দামও এখন অনেক বেড়েছে।
খানসামার আত্রাই নদী পাড়ের কৃষক আবুল হোসেন (৪৫) বলেন, ‘আমি ৩ বিঘা জমি থেকে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ আঁটি (খড়) পেয়েছি। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ টাকার বেশি। খড়ের দাম ভালো হওয়ায় আমি বেশ সন্তুষ্ট।’
খানসামা বাজারে খড় কিনতে আসা গৌবিন্দ্র রায় (৩০ ) বলেন, ‘আমার খামারে ৮টি গরু রয়েছে। আমরা ৯ জন মিলে খড় কিনে এই বাজারে এনে বিক্রি করি। মৌসুম চলাকালীন খড়ের দাম কিছুটা কম হলেও আমরা বেশ ভালো লাভ করছি। তিনি আরও জানান, তারা গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে ভরা মৌসুমে ১টি আঁটি (খড়) ২ টাকায় কিনে পরে সেটি বাজারে এনে ৬-৭ টাকায় বিক্রি করেন, ফলে লাভও হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন, আগের তুলনায় বর্তমানে খড়ের দাম একটু বেড়েছে। এতে কৃষকের লাভবান হলেও খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। সেজন্য খামারিরা শুধু খড়ের ওপর নির্ভর না হয়ে উন্নত মানের ঘাস চাষ করলে গো-খাদ্যের চাহিদা মেটানো যাবে।
কেকে/এমএস