অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বিদায় নিলেও তার দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার রেকর্ড ও কীর্তিতে ভরপুর। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকাল অমর থাকবে।
আসুন এক নজরে দেখে নিই তামিমের গড়া রেকর্ডগুলো
দেশের এক মাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১৫ হাজার রানের মাইলফলক
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রান করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তামিম। মুশফিকুর রহিম পরবর্তীতে তার সঙ্গী হলেও, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ছিলেন শীর্ষ রান সংগ্রাহক। তবে ওপেনারদের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি।
বাংলাদেশের ওপেনারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ রান ও জুটি
টেস্টে ওপেনারদের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৫১৩৪ রান তামিমের। এ ছাড়াও ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েসকে সঙ্গে নিয়ে ৩১২ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়েছিলেন।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটির সঙ্গেও আছে তামিমের নাম। ২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে লিটন দাসকে নিয়ে গড়েছিলেন ২৯২ রানের জুটি। ওপেনার হিসেবেও এটিই সর্বোচ্চ।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটির সঙ্গেও আছেন তামিম। ২০১২ সালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ১৩২ রানের জুটি গড়েন তিনি।
তিন ফরম্যাটে সেঞ্চুরি
তামিম বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার, যিনি টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ওমানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে এই রেকর্ড গড়েন। ১০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
সর্বোচ্চ ফিফটি ও সেঞ্চুরি তামিমের
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তামিমের রয়েছে সর্বোচ্চ ২৫টি সেঞ্চুরি এবং ৯৪টি হাফ সেঞ্চুরি। মোট পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের সংখ্যা ১১৯, যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি ১৪টি। এ ছাড়াও টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়া বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার তিনি।
আর ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ফিফটি ৫৬টি। টেস্টেও সাকিবের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ফিফটি ৩১টি।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৫০ ছাড়ানো ইনিংস
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৫০ ছাড়ানো ইনিংস ১১৯টি। ওয়ানডেতে টানা সর্বোচ্চ ৫ ইনিংসে ৫০ ছোঁয়া বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার। এই রেকর্ডে পরে ভাগ বসিয়েছেন সাকিব।
ওয়ানডেতে ৮ হাজার রান
তামিম একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটার, যিনি ওয়ানডেতে ৮ হাজার রান অর্জন করেছেন। তার মোট রান ৮ হাজার ৩৫৭।
ছক্কার সেঞ্চুরি
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০টি ছক্কার মাইলফলক ছুঁয়েছেন তামিম। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তার ছক্কার সংখ্যা ১৮৮। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা–৪১টি এবং এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭টি ছক্কা মেরেছিলেন তিনি। এ ছাড়াও বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭৬০টি চার মেরেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
তরুণ সেঞ্চুরিয়ান
২০০৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরা
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২ বার ম্যাচ সেরা এবং ৭ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন তামিম।
শূন্য রানের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড
সব ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৩৬ বার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ডও তার নামে।
২০২৩ সালে আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালীন আচমকা সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন তামিম। তখন তিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। এই সময় তুমুল আলোড়ন তৈরি করে এই ঘটনা। পরদিন ঢাকায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন তিনি, বেরিয়ে এসে জানান সিদ্ধান্ত বদলের কথা।
এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দুই ম্যাচ খেলেন তিনি। তবে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার দূরত্বের খবর ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিয়ে নেয়। তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে যায় বাংলাদেশ। এবার পুরোপুরি বিদায় নিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।
কেকে/এআর