বিএনপি নেতা ও স্ত্রী মহিলা দলের নেত্রীর বিরুদ্ধে
চোরাই গরুর মাংস দিয়ে বিএনপি কর্মীদের ভুড়িভোজ, গ্রেফতার ২
এম আর সাইফুল, মাদারগঞ্জ, (জামালপুর)
প্রকাশ: শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:৫৯ পিএম আপডেট: ১১.০১.২০২৫ ৭:১১ পিএম (ভিজিটর : ২৬৪)
ছবি: প্রতিনিধি
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী (৪৮) ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের নেত্রী লায়লা খাতুন ইতির (৪০) বিরুদ্ধে এক কৃষকের গরু চুরি করে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভুড়িভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী কয়ড়া গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তাফা চৌধুরীর ছেলে তিনি ৬নং আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও শেরপুরের ভেনুয়া শ্রীবর্দী গ্রামীন ব্যাংক শাখা ব্যাবস্থাপকের দায়ীত্বরত আছেন বলে জানা গেছে।
গরুর চামড়া ও মাংস জব্দসহ এই ঘটনার সাথে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে মাদারগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। এই ঘটনায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার সকালে মাদারগঞ্জ উপজেলার জুনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নারী সমাবেশের আয়োজন করে। ওই সমাবেশে অংশ নেয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভুড়িভোজের আয়োজন করেন মাদারগঞ্জের আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানী রান্নার জন্য গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ উঠেছে।
চুরি হওয়া গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে গোয়াল ঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘরের দরজ খোলা ও ভেতরে থাকা তার নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাড় গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আজ শনিবার ভোরে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।
কৃষক এফাজ মন্ডল আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানী রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল। বিষয়টি জানাজানি হলে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কর্মী সুমন মন্ডল ও কসাই বজলু প্রামাণিক নামে দুই জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ সময় গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়। আজ শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বিএনপি নেতার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনার পর দলীয় কর্মী-সমর্থকরা গা-ঢাকা দিলে তাদের ভুড়িভোজের জন্য রান্না করা বিরিয়ানী স্থানীয়রা লুটপাট করে।
মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান জানান, মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেকে/এআর