যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল কিছুটা স্তিমিত থাকলেও তা আবারো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুনের কারণে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। দাবানল আক্রান্ত প্যাসিফিক প্যালিসেইডও ইটন এলাকায় রাত্রিকালীন কারফিউ দেওয়া হয়েছে। যেসব অধিবাসীরা আক্রান্ত এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন তাদের এখনই না ফেরার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, বাতাস আরও তীব্র হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর। সেক্ষেত্রে বাতাস বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আগুনও আরও তীব্র হতে পারে এবং আরও নতুন নতুন এলাকা গ্রাস করতে পারে।
ইতোমধ্যে ৪০ হাজারেরও বেশি একর এলাকা আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। কমপক্ষে ৪ লাখ বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ বা সতর্কতার জারি করেছে প্রশাসন। শনিবার আরও কয়েকটি এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত পানির স্বল্পতার কারণে অগ্নিপ্রতিরোধ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লস এঞ্জেলস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা অ্যাডাম ভ্যান গার্পেন।
দাবানলের সর্বশেষ খবরে সিএনএন জানিয়েছে, ভয়াবহ দাবানলে এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১০ হাজার বাড়ি-গাড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো।
গত মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভিন্ন ভিন্ন ৫টি এলাকায় দাবানল দেখা যায়। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত পর্যন্ত এই পাঁচ স্থানে দাবানল সক্রিয়ভাবে জ্বলছিল। এর মধ্যে দুটি দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের একেবারে গায়ে হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ধ্বংসের কারণ হয়েছে। এ দুটি দাবানল শহরের বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
কেন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেসে গত কয়েক দশক ধরে খরা, এরপর সাম্প্রতিক বছরগুলো ভারী বৃষ্টিপাত, পরে শরৎ ও শীতকালের শুষ্ক পরিস্থিতিতে ফিরে আসা সবই আগুনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। শক্তিশালী স্যান্টা আনা বাতাস গাছপালাগুলো শুকিয়ে ফেলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দিয়েছে। স্যান্ট আনা বাতাস হলো শক্তিশালী, শীতল, শুষ্ক, ঝড়ো বাতাস যাকে কখনো কখনো ডেভিল উইন্ডসও বলা হয়।
এই উচ্চ-চাপ বায়ু যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের গ্রেট বেসিন এলাকা যা মূলত নেভাডা, ইউটাহ, আইডাহো ও দক্ষিণ-পূর্ব ওরেগনের উসর মরুভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়। দাবানলের মধ্যেই তীব্র এই বাতাস আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়াও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য সরঞ্জাম ও জনবল সংকটকে দায়ি করছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, স্থানীয় সংস্থাগুলো তাদের সীমিত সরঞ্জাম নিলে বিশাল ও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া দাবানল ঠেকাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার চিফ বুধবার বলেছেন, এই দাবানল মোকাবিলার মতো যথেষ্ট দমকলকর্মী তাদের নেই। লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তাগুলোয় সাধারণ দিনেও যানজট থাকে। ফলে যখন সবাই ভূমিকম্প বা দাবানলের সময় পালানোর চেষ্টা করে তখন একেবারে অন্যরকম পরিস্থিতি দেখা দেয়। একারণে, দমকল কর্মীরাও মুক্তভাবে কাজ করতে পারেননি।
এছাড়াও এই এলাকার ভৌগলিক গঠনকে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করছে বলেও মনে করছেন কেউকেউ।
কেকে/এইচএস