রাত সাড়ে ১০টা, পৌষের কনকনে শীত। এমন সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফজলুল হক হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে কয়েকজনের কাঁধে করে গেস্টরুম থেকে বের হতে দেখা যায়। শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ায় তিনি হাঁটতেও পারছিলেন না। অন্যদিকে কয়েকজন সহপাঠী হাঁপাচ্ছেন ।
জানা গেছে, ‘পরিচয় পর্ব’ নামে গেস্টরুম চালু করে দীর্ঘ সময় নবীনদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
একই অভিযোগ উঠেছে হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল এবং আশরাফুল হক হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও। আদব-কায়দা শেখানো নামে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং ২০ থেকে ৫০টি উদ্ভট নিয়ম মুখস্থ করানোর অভিযোগ উঠেছে।
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, গতকাল রাত ৯টায় আমাদের রুম থেকে ডেকে গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মোবাইল ফোন তল্লাশি করে হলের নিয়মকানুন জানানো হয়। নিয়মগুলোর মধ্যে ছিল—সাইকেল চালানো যাবে না, ২য় তলায় যাওয়া নিষেধ, বড় ভাইদের দেখলেই সালাম দিতে হবে, হলে লুঙ্গি পরা যাবে না, হল গ্রন্থাগারে ল্যাপটপ নেওয়া যাবে না, ক্যান্টিনে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি।
এরপর ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এসে আমাদের দাবি-দাওয়া জানতে চান। তারা চলে গেলে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। আমাদের অপরাধ ছিল বড় ভাইদের কাছে সমস্যার কথা বলা। এরপর ছোটখাটো ভুল ধরে একজন একজন করে ডেকে গালিগালাজ এবং উদ্ভট শাস্তি দেওয়া হয়, যেমন—১০ রকমের হাসি, ১০ রকমের সালাম, গাছে ঝুলে থাকার অভিনয়, নাচ করা ইত্যাদি। এমন পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে একজন সহপাঠী মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১২টায় গেস্টরুম শেষ হয়।
এ বিষয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যার জানান, হলের নবীনবরণের দিন আমি নবীনসহ বাকি সকল শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দিয়েছি যে, হলে কোনো ধরনের গেস্টরুম চলবে না। নবীনদের ওপর এধরনে যেকোনো চাপ আসলে সরাসরি আমাকে জানানোর জন্যও আমি তাদের বলে এসেছি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো যে, এত বড় ঘটনার ব্যাপারে তারা কেউই এখনও আমার সাথে কথা বলেনি। আমি আজকেই তাদের সাথে বসব এবং এই ঘটনার সাথে জড়িতদের খোঁজার চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম জানান, আমি নিজেও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি যে বিভিন্ন হলে গেস্টরুম করানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশ আছে যে কোনো হলে কোনো ধরনের গেস্টরুম বা নির্যাতন চলবে না। প্রক্টরিয়াল টিম ইতোমধ্যেই ঘটনার তদন্তে নেমেছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তিত আওতায় আনা হবে।
কেকে/এএম