রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারটি আবাসিক হলে রাতের আঁধারে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দিবাগত রাতে এই ঘটনা ঘটে। সকালে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আজ রোববার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান ও সৈয়দ আমীর আলী হলে কোরআন পোড়ানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর কিছুসময় পর শোনা যায় শহীদ হবিবুর রহমান ও মতিহার হলেও কোরআনা পড়ানো হয়েছে। পরবর্তীতে ডিজিএফআই ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সকল আবাসিক হল পরিদর্শন করে শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল ও মাদার বখশ্ হলেও কোরআন পোড়ানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান।
এছাড়া, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ৩য় ব্লকের প্রথম তলার সিড়ি বরাবর এবং ২য় ব্লকের ৪৩৪ নম্বর কক্ষের সামনের দেয়ালে পদ্মফুলের ছবি আকানো দেখা গিয়েছে। পদ্মফুল ইসকনের প্রতীক এবং ভারতীয় জনতা পার্টি'র (বিজেপি) নির্বাচনী প্রতীক। তাছাড়া ওই কক্ষের জানালায় ইসকন ইয়ুথ ফেস্টিভালের লিফলেট সাটানো দেখা গেছে। তবে রুমটি তালাবদ্ধ থাকায় কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে শিহাব খান নামে জিয়া হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, আজ আমাদের শহীদ জিয়াউর রহমান হল মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করার পর প্রতিদিনের মতো আমরা কোরআন তেলাওয়াত করতে গিয়ে দেখি, দুটি কোরআন শরীফের প্রথম দিকের দুটি সূরা এবং শেষের দিকের দুটির সূরা অবিশ্বাস্যভাবে পুড়িয়ে বুক সেলফে রাখা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, দুটি কোরআন শরীফের হার্ড কভার সহ প্রথমে ও শেষের কিছু পৃষ্ঠা এবং মাঝখানের ৭০শতাংশ পৃষ্ঠা অক্ষত রয়েছে, এতে করে করে এটা নিশ্চিত যে কোরআন শরীফ গুলো কোনভাবে কয়েল বা অন্য কোন আগুনে পুড়ে নাই।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়গুলো থেকে অনুমান করা যাচ্ছে যে কোন এক গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বড় কোন উদ্দেশ্য বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত হবে কাজটি করেছে। বিষয়টা অনেক হৃদয়বিদারক।
অন্য শিক্ষার্থীরা বলেন, একসাথে কয়েকটি হলে ঘটানো এই ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, কোনো গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এটা করেছে। বিষয়টা হৃদয়বিদারক। এটি উস্কানিমূলক ঘটনা হতে পারে। কোনো একটা গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে দাঙ্গা বাঁধানো বা ফ্যাসাদ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তারা চাচ্ছে যে একটা অশান্তি বা অরাজকতা তৈরি হোক। তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের উদঘাটন করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে দুপুর ১টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে রাজশাজী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কোরআনের অবস্থান প্রত্যেক মুসলমানের কাছে অনেক উপরে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করবো। পাশাপাশি হল প্রশাসন থানায় অভিযোগ জানাবেন। জড়িতদের খুজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো আমরা। তবে, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমরা বিশেষ আহ্বান জানাবো, তারা যেন কোনো উসকানির ফাঁদে পা না দেয়।
এছাড়া কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে আহবায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে অনধিক ৩ দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর।
এদিন বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে কোরআন পুড়ানোর প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের এক মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে রাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, কাল রাতে গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় স্পন্দন আল-কোরআনকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকে এখানে এসে জানতে পারলাম, আরও তিনদিন আগেও নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদেও এরকম ঘটনা ঘটেছিলো। আপনারা গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, গত ৫ তারিখের পরে যারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে তারাই এই কাজ করেছে। আজ এখান থেকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলাম এর ভিতরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।
এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, আমার মনে হয় প্রত্যেক ধর্মের মানুষই এমন ঘটনায় মর্মাহত হবেন৷ বর্তমান দেশের পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে আমাদের অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো রামুর সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷ আমরা আর কোনো দাঙ্গা চাই না৷
ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, বিনোদপুর ও কাজলা ফটকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদ এবং মন্দিরগুলোতেও আমরা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করায় শিক্ষার্থীদের পরিচয় পত্র রাখার বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে।
কেকে/এআর