শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১০ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: দুই ঘণ্টার চেষ্টায় খিলগাঁওয়ের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে      তিন বিভাগে ৩ দিন বজ্রবৃষ্টির আভাস      খিলগাঁওয়ে স-মিলে আগুন      মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন: ড. ইউনূস      ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে আমরা ঐক্য চাই’      রাসূল (সা.) এর কটুক্তিকারীর শাস্তির দাবিতে গোবিপ্রবিতে বিক্ষোভ      বাধ্যতামূলক অবসরে অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার      
প্রিয় ক্যাম্পাস
ক্যাম্পাস সংস্কার বাদ দিয়ে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনে ব্যস্ত পবিপ্রবি প্রশাসন
জান্নাতীন নাঈম জীবন, পবিপ্রবি
প্রকাশ: সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:৪২ পিএম আপডেট: ১৪.০১.২০২৫ ১১:১৪ এএম  (ভিজিটর : ৬৯০)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম সংকটে ছাত্রছাত্রীদের পোহাতে হয় সীমাহীন ভোগান্তি, আবাসন ব্যবস্থার রয়েছে করুণ অবস্থা, হলের ক্যান্টিন ও টিএসসি নিয়ে নেই অভিযোগের অন্ত। বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক সংস্কারের দাবি থাকলেও তা নিয়ে নেই কার্যকরী উদ্যোগ। বিগত আমলে ভেঙ্গে ফেলা বিশ্ববিদ্যালয় স্কয়ারের পুনঃস্থাপনের দাবি বার বার উঠলেও যৌক্তিক এসব সংস্কার বাদ দিয়ে যেন বিগত আওয়ামী প্রশাসনের পুনর্বাসনে ব্যস্ত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্য প্রশাসন। যা নিয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস.এম. হেমায়েত জাহান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এবং আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো: জামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রশাসন বিতর্কিত কর্মকর্তা শামসুল হক রাসেলকে চাকুরিতে পুনর্বাসন করে এ বিতর্ককে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ‘জুলাই বিপ্লব’ নিয়ে এ সকল শিক্ষকরা শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাদের সামনে বিভিন্ন প্রেরণামূলক বক্তব্য দিলেও বর্তমানে তাদের এমন বিতর্কিত কর্মকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মাঝে কিছুটা হতাশার সৃষ্টি করেছে। 


এর আগে আওয়ামী আমলে বহিষ্কৃত হওয়া ল্যাংগুয়েজ এন্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাবেক নেতা অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসানকে পুনর্বাসিত করে এ প্রশাসন। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক জামাল হোসেনের একক সুপারিশে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও অধ্যাপক মেহেদী হাসানের বহিষ্কারাদেশ গত ১৫ আগস্টে তুলে নেয় প্রশাসন। শুধু তাই-ই নয় মেহেদী হাসানের বিষয়টি আদালতে উত্থাপিত হলে তৎকালীন সময়ে অধ্যাপক জামাল হোসেন ‘আদালতে শুনানির সাথে জড়িত’ সন্দেহে মেহেদী হাসানের পক্ষ হয়ে ক্যাম্পাসের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে উচ্চবাচ্য করেন যা প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, নিয়োগে অনিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে অধ্যাপক মেহেদীর বিরুদ্ধে। এমনকি বিগত আওয়ামী লীগের আমলে দলীয় পরিচয়ে বেশ দাপটের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্নাতকে ২.৯৫ সিজিপিএ পাওয়া এ শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা পূরন না করেও দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদোন্নতির শর্ত পূরন না করেই নিয়েছেন একের পর এক প্রমোশন। তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের জুন মাসে আনিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ সমূহের তদন্তে সত্যতা পায় দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কমিটি যা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিকে নিশ্চিত করা হয়। এতো কিছুর পরও বিপ্লব পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষক অধ্যাপক জামাল হোসেনের একনিষ্ঠ ব্যক্তি হওয়ায় অধ্যাপক মেহেদীকে শাস্তির বদলে উল্টো তার জন্য তিনি সুপারিশ করেন ও সাময়িক বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে বরখাস্ত থাকাকালীন তার বেতন ভাতাদি প্রদান করার আদেশ জারি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের জোর আপত্তিতে গত ১২ ডিসেম্বর উক্ত প্রতিকল্পাদেশটি বাতিল করা হয়।


শুধু আওয়ামী পুনর্বাসনই নয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সরাসরি বাধাদানকারী দেশব্যাপী বিতর্কিত শিক্ষক ড. সন্তোষ কুমার বসুর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাকে ছুটি দিয়ে তার দায় থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দেয় উপাচার্য রফিকুল ইসলাম প্রশাসন। জুলাই বিপ্লবের সময়কালে ‘৫ হাজার মানুষ মারা লাগলেও সরকার চিন্তা করবে না’ এমন বিতর্কিত মন্তব্য করে শিক্ষার্থীদের হল থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন তৎকালীন এ রেজিস্ট্রার। এমনকি সে সময়ে তিনি শিক্ষার্থীদের দিকে আপত্তিকর শব্দচয়ন করেন। যাতে করে সেসময় তিনি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচিত হন। তাছাড়া আওয়ামী পরিচয়ে প্রতাপশালী এই শিক্ষক রেজিস্ট্রার-প্রক্টরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ নিজের কাছে পুঞ্জীভূত করে রাখেন। তদানীন্তন সময়ে একটি জাতীয় দৈনিকে তার এ বিষয়টি উঠে আসলে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন সময়ে দূর্ব্যবহার, গ্রুপিংসহ একাধিক অভিযোগ উঠে আসে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নবনিযুক্ত উপাচার্যের বিতর্কিত এ শিক্ষককে ছুটি দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গত নভেম্বর মাসে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে শিক্ষকদের ব্যাপক আপত্তির মুখে এ সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসে প্রশাসন। 


সব কিছু ছাপিয়ে গত ডিসেম্বরে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনে সবচেয়ে বড় চমক সৃষ্টি করেছে পবিপ্রবি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত কর্মকর্তা পিও-টু প্রোভিসি শামসুল হক রাসেলের সাময়িক বহিষ্কার আদেশ তুলে দেয় প্রশাসন। যার বিরুদ্ধে আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে হেনস্থা, হত্যার হুমকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনসহ রয়েছে একাধিক অভিযোগ। সর্বশেষ তাকে অসদাচরণের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ৪ মার্চ চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে হেনস্থা করার ঘটনায় তদন্তে সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটি। বিশ্ববদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান তার এ বহিষ্কারাদেশ তুলে দিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসনের একাধিক সূত্র। এর আগে গত আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের উদ্যোগে তার বহিষ্কার আদেশ বাতিল করা হলেও সেসময় শিক্ষকদের তীব্র আপত্তির মুখে কার্যকর করা হয়নি। কিন্ত ৪ মাস পর এসে সে সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। অথচ রাসেলের অসদাচরণে তার বিচারের দাবিতেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন লাগাতার আন্দোলন করেছিলো। কিন্ত জুলাই বিপ্লবের পর এ কর্মকর্তার এমন পুনর্বাসন হতবাক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের। 


এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান জানান, “এ বিষয়ে আগের প্রশাসন (আগস্ট মাসে) রিজেন্ট বোর্ডেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারনে তাকে বাধা দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। তবে তার অতীত অপরাধের বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান আছে, সেখানে অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনবে প্রশাসন”।

তাহলে গত ৪ মাস কেন তার যোগদানের  প্রতিকল্পাদেশ দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এতোদিন না দেওয়ার চেষ্টা করেছি তবে এখন দেখছি না দিলে আমরা আইনি জটিলতায় পড়তে পারি তাই আইনের প্রতি সম্মান জানাতেই ৪ মাস পর হলেও আমরা প্রতিকল্পাদেশটি দিয়েছি। তবে কোন ধরনের সুপারিশে এমনটা করা হয়নি”।


বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক জামাল হোসেনকে অধ্যাপক মেহেদী হাসানের পুনঃর্বহালের বিষয়ে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও যথাযথ কতৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন।”এ সময় তাকে সুপারিশের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মুঠোফোনে এসকল বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি এবং পরে সামনাসামনি কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন।


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিগত সরকারের আমলে অনেকে প্রশাসনের রোষানলে পড়ে চাকরি হারিয়েছেন। কিন্ত সেসকল বঞ্চিতদের চাকরি ফেরত দেওয়ার আগেই এদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে কিভাবে চাকুরিতে পুনর্বহাল করা হলো সেটা আমারও প্রশ্ন এবং আমিও এগুলো নিয়ে উপ-উপাচার্যকে জিজ্ঞেস করেছি।তিনি আরও বলেন, “যাদের নিয়ে অভিযোগ তাদের বিষয়ে বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত আছে। তবে সেসময় অধ্যাপক জামাল ও অধ্যাপক হেমায়েত রিজেন্ট বোর্ডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক দায়িত্বে ছিলেন। আমি যেহেতু জুলাই বিপ্লবের ২ মাস পরে এসেছি ওনারাই সেগুলো ভালো বলতে পারবেন কি করে এগুলো হলো”।


কেকে/এমএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলার মাটিতে ফ্যাসিস্টদের জায়গা হবে না: অধ্যক্ষ মুন্তাজ আলী সরকার
দেশে চলমান নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে মশাল মিছিল
মহিলা জামায়াত নেত্রীকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রলি খাদে, নারীসহ নিহত ২
দুই ঘণ্টার চেষ্টায় খিলগাঁওয়ের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে

সর্বাধিক পঠিত

শহিদ দিবসের ফুল আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী
নালিতাবাড়ীতে মাদকবিরোধী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
টঙ্গীতে গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
পরকীয়ার জেরেই স্বামী সন্তানের হাতে বলি স্কুলশিক্ষিকা মিলি
মহিলা জামায়াত নেত্রীকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা

প্রিয় ক্যাম্পাস- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝