রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চরাঞ্চলের বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান আশঙ্কাজনকভাবে নিম্নমুখী। সকাল ১০টায় দেরিতে শুরু হওয়া ক্লাস দেড়টা বা তারও আগে শেষ করে শিক্ষকরা বাড়ি ফিরে যান। নিয়ম অনুযায়ী বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ক্লাস চালু থাকার কথা থাকলেও তা কোনোভাবেই মানা হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) উত্তর গণেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর দেড়টায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ এবং শ্রেণিকক্ষের দরজায় তালা ঝুলছে। বারান্দায় স্থানীয় শিশুরা হৈচৈ করছে, মাঠে চড়ে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। বিদ্যালয়ের পাশে থাকা বাসিন্দারা জানান, শিক্ষকরা দেরিতে আসেন এবং দুপুরের মধ্যেই ছুটি দিয়ে চলে যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সহকারী শিক্ষিকা ফাহিমা খাতুন বিদ্যালয়ের পুরো কার্যক্রম পরিচালনার মূল ক্ষমতা নিজের হাতে রেখেছেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার কথাই বিদ্যালয়ে শেষ কথা। প্রধান শিক্ষক তহমিনা বেগমের কোনো নির্দেশ কার্যকর হয় না।
কুতুব তুলসীর হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও মাত্র দুজন উপস্থিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান ‘ক্যাব প্রোগ্রামে’ থাকার কথা জানালেও অন্য শিক্ষকের অনুপস্থিতি সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দেননি। সহকারী শিক্ষক সোলায়মান গণি বিদ্যালয়ে অনিয়মিত থাকেন, কারণ তিনি সাবেক বিবাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে প্রভাবশালী এবং ম্যানেজিং কমিটির ঘনিষ্ঠ।
এই ধরনের অনিয়মের ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অনেকেই বেশি খরচ করে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাগমা শিলভিয়া খান জানিয়েছেন, বেশ কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই কয়েকজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম আশ্বাস দিয়েছেন, বিদ্যালয়ের সঠিক কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএম