ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের দরিদ্র কৃষক কামাল মিয়ার ছেলে আজিজুল হক (২২) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে দৃষ্টিহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আজিজুল হক মাধবদী পৌনাপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান আজিজুল। পরিবারের বড় ভাইয়ের ২০২০ সালে মৃত্যুর পর সংসারের পুরো দায়িত্ব তার কাঁধে পড়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। মাসে ১৮ হাজার টাকা আয় করে তিনি বাবার চিকিৎসা, ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ এবং সংসারের খরচ বহন করতেন।
গত বছরের ১৮ জুলাই নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন আজিজুল। এ সময় পুলিশের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। তার মুখে ও দুই চোখে গুলি লাগে। প্রথমে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার খরচ যোগাতে আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবরা সাহায্য করেন।
আজিজুলের বাবা কামাল মিয়া বলেন, আমার পোলায় পুলিশের গুলি খাইয়া অন্ধ হয়ে গেছে। এই পোলাই আমাগো সংসারের ভরসা আছিল। এখন আমার পোলায় মরা মাইনষের মতন পইড়া আছে। সরকার থেইকা ৫ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড দিছে। হের লাইগ্যা কি আমার পোলায় নতুন কইরা দেশ স্বাধীন করতে আন্দোলন করছিল? পুলিশের গুলি খাইছিল? আমরা ট্যাহা চাই না, ভালা চিকিৎসা চাই।
আজিজুলের বাবা কামাল মিয়া আরও বলেন, আমার পোলা দেশের জন্য আন্দোলন করতে গিয়া নিজের জীবনটা শেষ কইরা দিছে। সরকার যদি পোলার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করত, তাইলে আমাগো পরিবারটা এইভাবে অন্ধকারে ডুইবা যাইত না।
আজিজুলের মা শুকতারা বেগম বলেন, সংসার চালানো অনেক কষ্ট হয়ে পড়ছে। এখন ছেলেরে কীভাবে চিকিৎসা করাবো? পাড়া-প্রতিবেশী সহযোগিতা করছে। বড় ছেলে মারা গেছে তারপর এই ছেলেই সংসার চালাতো। আমার সেই ছেলেরই এখন পরের সাহায্যে চলতে হয়। সরকার যদি উন্নত চিকিৎসা করিয়ে অন্তত একটা চোখও ভালো করতে পারত, তাহলেও ছেলের জীবনটা চলত।
আজিজুল হক বলেন, স্বৈরাচার হটিয়ে বিপ্লবী সরকার এনেছি। কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। তখন আশ্বাস দিয়েছে চোখের চিকিৎসা করাবে। এখন পর্যন্ত আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা সমন্বয়কও এসে দেখেনি। শুনেছি জুলাই বিপ্লব ফাউন্ডেশন থেকে অনেকে সহায়তা পাচ্ছে। আমি কিছুই পেলাম না। বেঁচেও যেন মৃত, পরিবারের বোঝা হয়ে আছি। চলতে-ফিরতে কষ্ট হয়। কারো সহায়তা ছাড়া কোথাও যেতে পারি না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি মো. মাইনুদ্দিন বলেন, আজিজুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা জানান, আজিজুলসহ পাঁচজনকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের নামের তালিকা জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে যাতে তারা জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে সহায়তা পায়।
কেকে/এএম