শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১০ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: দুই ঘণ্টার চেষ্টায় খিলগাঁওয়ের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে      তিন বিভাগে ৩ দিন বজ্রবৃষ্টির আভাস      খিলগাঁওয়ে স-মিলে আগুন      মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন: ড. ইউনূস      ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে আমরা ঐক্য চাই’      রাসূল (সা.) এর কটুক্তিকারীর শাস্তির দাবিতে গোবিপ্রবিতে বিক্ষোভ      বাধ্যতামূলক অবসরে অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার      
খোলাকাগজ স্পেশাল
সংস্কার নাকি কালক্ষেপণ জাতীয় নির্বাচন কতদূর
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৪৬ এএম  (ভিজিটর : ১৪৬)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এক জটিল প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করলেও দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার ইস্যুতে তেমন গতি পাচ্ছে না নির্বাচন প্রক্রিয়া। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত অবস্থানে রয়েছে খোদ সরকার। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন রাষ্ট্রের সংস্কার এবং জুলাই গণহত্যার বিচার শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। তাদের এ ভূমিকায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন পেছানোর প্রক্রিয়া যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে। বিরোধী দলগুলো দ্রুত নির্বাচন না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া জনমনে একটি ধারণা তৈরি হচ্ছে যে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমতায় থাকার সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ প্রক্রিয়া রাজনৈতিক সহিংসতার জন্ম দিতে পারে এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি আরো দুর্বল করতে পারে।

এদিকে বিভিন্ন মহল থেকে কথা উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করছে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের একটা সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন ২০২৫-এর শেষে অথবা ২০২৬-এর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। যদি রাজনীতিবিদরা সংস্কারের আগে নির্বাচন চান; তাহলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। 

তবে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। আমরাই তো সংস্কার আগে তৈরি করেছি, জাতির কাছে উপস্থাপন করেছি। সেই ২০১৬ সালে আমরা ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছি, ২০২৩ সালে ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাই তো সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে এবং গভর্ন্যান্সের মধ্যে মোটামুটি একটা স্ট্যাবিলিটি (স্থিতিশীলতা) এসেছে। আগামীকাল (বুধবার) সংস্কার-সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদন এসে যাবে। সুতরাং মনে হয় না আরো বিলম্বিত করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে, ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য কতগুলো আনুষ্ঠানিকতা আছে, যেমন ভোটার তালিকা। যদি কেউ হালনাগাদ করতে চান, সেটা এক মাসের মধ্যেই করতে পারবেন। এরপর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ এক-দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সবই তো তৈরি। নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন করার জন্য তারা প্রস্তুত এবং তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে তৈরি আছে।’ তিনি বলছেন, ‘এ রকম ক্রিটিক্যাল সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তাটা আসে কোত্থেকে? নির্বাচন পেছানোর চিন্তাটাই-বা আসে কোত্থেকে? কারণ, এটা তো আপনার প্রথম কাজ। আপনি দেশকে যদি একটা লাইনে... রেললাইনের ওপরে তুলতে চান, তাহলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে সমস্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। উনি একজন গুণী মানুষ। তিনি বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। কিন্তু তাকে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে যদি কেউ ফেলে তাহলে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জাগে। আপনি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারিখ ঘোষণা করুন। আপনি বলুন যে এত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা আশা করি সরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সত্যিকার অর্থে দেশে গণতন্ত্র আসবে, মানুষ স্বাধীন থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার। কিন্তু সেটা নিয়ে বেশি দেরি করা উচিত হবে না। ১৭ বছর দেশের মানুষ ভোট দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে উদগ্রীব দেশের মানুষ।’

সরকার দাবি করছে, দেশে নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তারা বলছে, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তবে রাজনীতিবিদরা বলছে, এ সংস্কার প্রক্রিয়া আসলে সময়ক্ষেপণের কৌশল। সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া শুরু করে ক্ষমতায় থাকার সময় বাড়াতে চাইছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধী দলগুলোর এ অবস্থান উপেক্ষা করলে রাজনৈতিক সংঘাত বাড়বে এবং আন্দোলন-সংগ্রাম নতুন মাত্রা পাবে। ফলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, বিগত স্বৈরাচারী সরকার গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে এবং জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। দ্রুত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই জনগণের ক্ষমতা পুনঃস্থাপন সম্ভব। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণ করেছে। তাই যত দ্রুত নির্বাচন হবে, ততই জনগণ সঠিকভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে। তবে সরকার এ দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে সংস্কারের কথা বলে কালক্ষেপণ করছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সরকারের সংস্কার পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছেন। তাদের দাবি, নির্বাচন আগে নয়, আগে সমাজের বৈষম্য দূর করতে হবে। তারা মনে করেন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক কাঠামোতে বৈষম্য দূর না হলে ভোটাধিকার অর্থহীন হয়ে পড়বে। তবে তাদের এ অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ছাত্র আন্দোলনের এ অবস্থান গণতন্ত্রের পথে বাধা তৈরি করছে। কারণ তারা জনগণের মৌলিক ভোটাধিকারের চেয়ে কাঠামোগত সংস্কারকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। একদিকে তারা ভোটের মাধ্যমে সমাজের পরিবর্তন চান, অন্যদিকে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করে সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে জনগণকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আমিন বেপারি বলেন, ‘সংস্কারের নামে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাব গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন নিশ্চিত করা। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উচিত তাদের দাবিগুলো নিয়ে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পেছানোর চেয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সঠিক সময়ে সম্পন্ন করাই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই একমাত্র পথ। তাই সংস্কারের প্রস্তাবকে পাঁয়তারার বদলে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর প্রক্রিয়া হিসেবে দেখানোর দায়িত্ব সরকারের।’

কেকে/এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  জাতীয় নির্বাচন   সংস্কার   অন্তর্বর্তী সরকার  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলার মাটিতে ফ্যাসিস্টদের জায়গা হবে না: অধ্যক্ষ মুন্তাজ আলী সরকার
দেশে চলমান নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে মশাল মিছিল
মহিলা জামায়াত নেত্রীকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রলি খাদে, নারীসহ নিহত ২
দুই ঘণ্টার চেষ্টায় খিলগাঁওয়ের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে

সর্বাধিক পঠিত

শহিদ দিবসের ফুল আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী
নালিতাবাড়ীতে মাদকবিরোধী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
টঙ্গীতে গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
মহিলা জামায়াত নেত্রীকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা
পরকীয়ার জেরেই স্বামী সন্তানের হাতে বলি স্কুলশিক্ষিকা মিলি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝