কথায় আছে “সবুরে মেওয়া ফলে” অর্থাৎ ধৈর্য ধারণ করলে সফলতা পাওয়া যায়। এখানে মেওয়া অর্থ বেদেনা, আঙ্গুর, পেস্তা জাতীয় ফলকে ইঙ্গিত করলেও প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে মেওয়া নামে একটি ফল রয়েছে যা আতা অ্যানোসিস পরিবারভুক্ত এক ধরনের যৌগিক ফল। মেওয়া ফল আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। মেওয়া ফলের আদি নিবাস পূর্ব আমেরিকা।
বহু বছর আগে পূর্ব আমেরিকা থেকে ভারতবর্ষে আসে মেওয়া ফল। এখন উপ-মহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এটি দেখা যায়। সুস্বাদু এ মেওয়া ফলটি বিভিন্ন বন জঙ্গল, বাড়ির আঙিনায় জন্মে। কখনো আবার কেউ রোপনও করে। মাগুরার শালিখা উপজেলায় কয়েক দশক আগেও বৃক্ষটি অসংখ্য পরিমান ছিল তবে এখন তা বিলুপ্তির পথে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন, ঘন বসতির কারণে কমছে এ বৃক্ষগুলো। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মেওয়া গাছটি এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। মেওয়া ফলের ভিতরে একটি করে বীজ ঘিরে থাকা নরম ও রসালো অংশই খেতে হয় যা অনেকটা চিনিকাকর দানাদার জাতীয়। এ ফলের বীজ কালো এবং কাঁচা ফলের বীজ সাদা। মেওয়া ফলের বাইরের অংশ খাচ কাটা খাচ কাটা।
মেওয়া ফলের গাছের আকার খুব বড় নয়। উচ্চতায় ৫-১০ মিটার। শীতকালে এর পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়, ফুল ধরে। পাতার আকৃতি বল্লমের মতো, অগ্রভাগ সরু। এর ফুল দেখতে কাঁঠালি চাঁপার মতো যার রঙ হালকা সবুজ থেকে সবুজাভ হলুদ হয়ে থাকে। কাঁচা ফল খাওয়া যায় না। বেলে দো-আঁশ মাটিতে আতা গাছ ভালো জন্মে। বীজ থেকে এর চাষ করা হয়। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল ধরে এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পেকে যায়। মেওয়া ফল গোলাকৃতির হয়ে থাকে।
এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও শর্করা জাতীয় উপাদান থাকে। পাকা ফলের শাঁস মিষ্টি হয়ে থাকে। ফলটি সুস্বাদু হলেও বীজ বিষাক্ত। এটি একটি গুচ্ছিত ফল অর্থাৎ একটি মাত্র পুষ্পের মুক্ত গর্ভাশয়গুলো হতে একগুচ্ছ ফল উৎপন্ন হয়। পাকা ফল সুমিষ্ট হওয়ার কারণে অনেক সময় পিঁপড়া বা পোকার সংক্রমণ হয়, সাদা রঙের পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। মেওয়া ফলের রয়েছে অনেক গুণ। শুধু স্বাদের কারণেই নয়, স্বাস্থ্যের জন্য এটি দারুণ উপকারী ফল।
চিকিৎসকরা বলছেন মেওয়া ফল হাড়ের গঠন মজবুত, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর, হজম শক্তি বৃদ্ধি, চোখের কর্ণিয়া ও রেটিনাকে সুরক্ষিত রাখে এবং দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে, চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। উপকারী এ ফলটি বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ জন্মালেও আইল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া সহ কয়েকটি দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়ে থাকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আড়াপাড়া ইউনিয়ের পুকুরিয়া গ্রামের বজলুর রহমানের বাড়িতে দেখা মেলে একটি মেওয়া বৃক্ষের। বাড়ির উত্তর পশ্চিম কর্নারে সযত্নে রোপন করা এ গাছে বেশ কয়েকটি ফল ধরেছে।
গাছটির মালিক বজলুর রহমান জানান, শুনেছি মেওয়া ফলকে জান্নাতি ফল বলা হয়। তাই শশুর বাড়ি থেকে একটি এনে বাড়িতে রোপন করেছি।
গাছটির বিলুপ্তি প্রতিরোধে শ্রী ইন্দ্রনীল এ্যাসোসয়েটস এর প্রধান সংগঠক শিক্ষক ও গবেষক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, মেওয়া ফল শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে বিভিন্ন ঔষধী গুণ।তাই এই ফলটির জিনোম সিকোয়েন্স আপডেটট করে বৃক্ষটি রোপন পূর্বক মানোন্নয়ন করা দরকার তাতে করে একদিকে যেমন দেশীয় ফল বৃদ্ধি পাবে অপর দিকে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন বলেন, শুধুমাত্র মেওয়া ফল নয় বিলুপ্তপ্রায় সকল প্রকার দেশিয় ফলের বৃক্ষ বৃদ্ধি করতে আমরা একটা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি সেখানে দেশীয় ফলজ গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেকে/এএম