বাড়ির পাশে আরশি নগর, যেথায় পড়শি বসত করে, জনপ্রিয় এই গানের কথাগুলোয় মনের পর্দায় যে বাড়িটির দৃশ্য ভেসে উঠে, তারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায় বিয়ানীবাজারের নয়নাভিরাম পর্যটন স্পট আরশি নগরে।
আবহমান বাংলার মেঠো পথের ধারে কোলাহল মুক্ত, নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশে, প্রকৃতি ও কৃত্রিমতার যুগল মিশেলে সৃষ্ট আরশি নগর প্রথম দেখায়ই প্রেমে পড়তে বাধ্য যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক মাত্রই। প্রাত্যহিক জীবনের যান্ত্রিক কোলাহল ও কর্মব্যস্থতা থেকে শরীর ও মনকে সজীব প্রশান্তি এনে দিতে পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই পর্যটন স্পটটিতে।ফসলের প্রাচুর্য্য, শিল্পের গরিমা, প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য, একদিকে জীবন ধারার বৈচিত্র অন্যদিকে আবহমান বাংলার রূপশ্রী, এই দুইয়ের মিশেলে মনকাড়া বিয়ানীবাজারের আরশি নগর।
আরশি নগর বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে লাউতা ইউনিয়নের গজারাই এলাকায় অবস্থিত। আরশি নগরের স্বত্ত্বাধিকারী পৌরসভার কসবা গ্রামের সন্তান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফখরুল আহমদ। যিনি সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও তার মন পড়ে থাকে দৃষ্টিনন্দন এই আরশি নগরে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত আরশি নগরের সৌন্দর্য্য বর্ধনে অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফখরুল আহমদ। তাই তো ধাপে ধাপে এই পর্যটন স্পটটি আকর্ষিত করছে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের।
পাখির চোখে আরশি নগর দেখলে মনে হবে যেন, শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা কোন এক মনোরম দৃশ্য। পর্যটন স্পপটির ভিতরে ঢুকতেই নজর কাড়বে দুপাশে সারিবদ্ধভাবে থাকা বৈচিত্রময় গাছ-গাছালি। মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রাস্তা আপনাকে নিয়ে যাবে বঙ্গ বিলাসের দিকে। বঙ্গ বিলাস পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য নির্মাণাধীন কটেজ। দুই পাশে রয়েছে দুটি পুকুর, পুকুরের স্বচ্ছ জলে দেখা মিলবে নানা প্রজাতির মাছ। পুকুর পাড়ের চতুর্দিকে সবুজ ঘাস বিছানো রাস্তা রয়েছে পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ গাছালি। যা বৃক্ষ প্রেমীদের কাছে টানবেই।
আরশি নগরে ঘুরতে আসা পর্যটকরা যাতে স্বাস্থ্যকর মনোরম পরিবেশে খাবার সারতে পারেন সেজন্য স্পটটির ভেতরেই রয়েছে দুটি ছাউনি ঘর। এখানে বসে পর্যটকরা খাবার-দাবার সারতে পারেন। পাখির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আরশি নগরের স্বত্ত্বাধিকারী ফখরুল আহমদের। তাই তো তিনি ছাউনি ঘরগুলোর ভেতরে চতুর্দিকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছেন বাবুই পাখির বাসা।
এছাড়াও পর্যটন স্পটটির ভিতরে বিভিন্ন গাছের সাথে কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে হরেক প্রজাতির পাখির বাসা। তার মতে, ‘বাংলার পাখি, বাংলায় রাখি, বাংলায় করুক গান, বাংলায় জন্মাক অজস্র পাখি, ভরে উঠুক মন-প্রাণ।’ পরিবার-পরিজন নিয়ে সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা যে কোনো দিবসে ছুটে আসতে পারেন আরশি নগরে। এখানে ছোট সোনামণিদের জন্য রয়েছে খেলার জায়গা, রয়েছে দোলনা, কৃত্রিম ঘোড়াসহ ছোটদের হরেক রকম খেলনা।
তাছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্য পালকি রয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে।আরশি নগর পর্যটন স্পটটির কাজ এখনো চলমান। তারপরও প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে। বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাড়াও সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন নারী-শিশুসহ নানা বয়সের মানুষজন আসছেন প্রকৃতি ও কৃত্রিমতার যুগল মিশেলে তৈরি আরশি নগরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।
দর্শনার্থীরা জানান, ‘বাড়ির পাশে আরশি নগর’ এতো সৌন্দর্য্যে ভরপুর হয়ে উঠবে কখনো ভাবিনি।’ এক কথায় মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটি পিকনিক স্পট আরশি নগর। বিকালে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা অনেকেই জানালেন, গ্রামীণ নির্মল পরিবেশে তৈরি আরশি নগর। এখানে এসে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পেরে আনন্দিত।
বিয়ানীবাজার তথা আশপাশ উপজেলার পর্যটন প্রেমীদের কথা চিন্তা করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফখরুল আহমদ গ্রামীণ পরিবেশে নির্মাণ করেছেন আরশি নগর। সবাইকে আরশি নগরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন তিনি।
কেকে/এএম