সিলেটে ভেজাল টমেটোর বীজ রোপণ করে শতাধিক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
চাষিদের দাবি, কুশিয়ারা বীজঘর থেকে বীজ কিনে এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। এই বীজঘর থেকে মঙ্গল রাজা জাতের বীজ কিনলেও সেই বীজের প্যাকেট ইপক জাতের বীজ বেশি ছিল। এতে করে মিশ্র জাতের টমেটোর কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সিলেটের শতাধিক কৃষক। ফলশ্রুতিতে উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও তার সত্যতাও মেলে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি কৃষক। বিঘা প্রতি কৃষকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকার বেশি।
ভুক্তভোগী কৃষক ও সিলেট সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুশিয়ারা বীজঘরের এই বীজ প্রতারণা উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে এই অভিযোগের ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কক্ষে বৈঠকও হয়েছে। সেখানে জেলা প্রশাসকের সামনে কুশিয়ারার বীজঘরের সত্ত্বাধিকারী লিটু স্বীকার করেন তার ২১ শত প্যাকেট বীজ ভেজাল এসেছিল। তিনি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানালেও মাঠ পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। উলটো বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নানা ধরণের কথা বলছেন কুশিয়ারা বীজঘরের মালিক লিটু।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, মাস চারেক আগে তারা কুশিয়ারা বীজঘর থেকে মঙ্গল রাজা জাতের টমেটোর বীজ ক্রয় করে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমি চাষ করেন শতাধিক কৃষক। কুশিয়ারা কোম্পানি তাদেরকে রাজা জাতের টমেটো বীজ দিলেও তা চাষ করে দেখেন ফলন এসেছে ইপক জাতের টমেটো। প্রায় একশ কৃষকের ৫০ হেক্টর জমিতে রাজার জায়গায় ইপক জাতের টমেটো ফলন হয়েছে। এতে করে এই কৃষকরা মূল রাজা জাতের টমেটোর ফলন থেকে বঞ্চিত হন। ফলে তাদেরর এক এক জনের বিঘা প্রতি প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার অপূর্ব লাল সরকার বলেন, আমাদের সিলেটে রাজা জাতের টমেটোর চাহিদা বেশি। চাহিদার পাশাপাশি এই জাতের টমেটোর দামও বেশি। সেই তুলনায় ইপক জাতের টমেটোর দাম ও চাহিদাও কম। তবে যে অভিযোগ এসেছে কুশিয়ারা বীজ ঘরের নামে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত নেমে ইপক জাতের টমেটো পেয়েছি ৯০ শতাংশ আর রাজা জাতের টমেটো পেয়েছি মাত্র ১০ শতাংশ।
কৃষক রমজান আলী বলেন, ৫ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছি। এত কমদামে কেন বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজা জাতের টমেটোর বীজ কিনে চাষ করেছি। কিন্তু ফসল ফলার পর দেখি এটা ইপক জাত। এই সিজনে এই জাতের টমেটো দাম কম। তাই এত কমদামে বিক্রি করতে হচ্ছে। টমেটোর বীজে জালিয়াতি করেছে কুশিয়ারা বীজঘর কোম্পানি। প্যাকেটে গায়ে মঙ্গলরাজা লিখে ভিতরে ইপকের বীজ দিয়ে দিছে। এখন যা লোকসান সব আমার।
কৃষক খিজির উদ্দিন বলেন, আমি বীজ নিয়ে চারা করে কৃষক পর্যায়ে বিক্রি করি। এলাকার মানুষ বেশিরভাগ বাকিতে চারা নেন। ফসল বিক্রি করে টাকা দেন। কিন্তু কুশিয়ারা বীজঘরের কারণে এবার কেউ আমাকে টাকা দিচ্ছেন না। কারণ যে জাতের টমেটোর চারা আমি দিয়েছি সেটা ফলন হয়নি। এই শীতের সিজনে সামান্য লাভের আশায় রাজা জাতের টমেটো চাষ করেন কৃষকরা। তবে কুশিয়ারা বীজঘরের এই বীজ প্রতারণার কারণে আমিসহ মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।
তাদের মতো সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের নোয়ারগাও, ফকিরেরগাও, দুখড়ি, উমাইরগাও, পাগইল, কালারুকা, নন্দিরগাও, বাবুরাগাও, দিঘিরপাড়, বাঘজুর, রায়েরগাও, নোয়াপাড়া গ্রামের শতাধিক কৃষক কুশিয়ারা বীজঘরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সিলেট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার অপূর্ব লাল সরকার বলেন, টমেটো বীজের এই প্রতারণার বিষয়টির অভিযোগের সত্যতা আমরা পেয়েছি। যখন এই অভিযোগের বিষয় নিয়ে বসা হয় তখন কুশিয়ারার বীজঘরের মালিক লিটু স্বীকার করে বলেন তার ২১ শত প্যাকেট বীজ ভেজাল এসেছিল। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেবেন।
এ ব্যাপারে কুশিয়ারার বীজঘরের মালিক লিটু বলেন, আমরা মূলত দেশের বাইরে থেকে বীজ আমদানি বিক্রি করি। এখানে কিছু প্যাকেটে ভেজাল হয়েছে। আমি আমার ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা পরবর্তী মৌসুমে এই ক্ষতিপূরণ পুষিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
কেকে/এএম