বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর ভিতরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। এর পরপরই আবদুল হান্নান মাসউদ এ অভিযোগের বিরোধিতা করেন।
বুধবার (১৬ জানুয়ারি) দুজনই তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে এসব জানান।
দুজনের পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো-
জুলকারনাইন সায়েরের পোস্ট: মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়-মুনীর চৌধুরীর এই বিখ্যাত উক্তিটি স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন (স্যাড) প্ল্যাটফর্মের দ্বিতীয় সারির সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ এর ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।
তবে মাসুদ এই প্রবাদকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সে তো বদলাচ্ছেই, পাশাপাশি পঁচে গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই গন্ধে জুলাইয়ের ঐতিহাসিক আন্দোলনের মূল স্পিরিটকে কলুষিত করে ফেলছে।
মাসুদের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে জুলাই বিপ্লবের সময়, এবং তাকে ভাবপ্রবণ ও অহংকারী মনে হয়। আমি ভেবেছিলাম এটি ছিল তার অল্প বয়স, স্বল্প অভিজ্ঞতা এবং আন্দোলনের উত্তেজনার কারণে। আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ২ আগস্ট একটি ঘটনায় তার ভিন্ন রূপ দেখলাম, যা আমাকে কিছুটা বিস্মিত করেছিল। পরবর্তীতে গত পাঁচ মাসে সেই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে।
সে আজব সব কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। টেলিভিশনে সে মায়াকান্না করছে এবং নিজের এলাকা হাতিয়ায় এমন আচরণ করছে যেন শেখ হাসিনার সরকারকে সে একাই পতন ঘটিয়েছে। এমন সংবাদও পেয়েছি যে, সে টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের পুনর্বাসন করছে। খুবই বিশ্বাসযোগ্য কিছু মানুষ আমাকে জানিয়েছেন, সরকারি টেন্ডার পাইয়ে দিয়ে সে বিপুল পরিমাণ টাকা বানাচ্ছে। তারপরও আমি এসব ‘ছোটখাটো’ কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু লিখতে চাইনি।
কিন্তু চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সে তার সীমা ছাড়িয়ে গেছে, আর এখন আমি বাধ্য হয়েছি তার সম্পর্কে লিখতে। স্যাডের অন্যদের মতো হান্নানও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভুলে গিয়েছেন, যাদের ছাড়া কোটা আন্দোলন ১৭ জুলাই-ই থেমে যেত। এখন সে নিজেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে মোড়ল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, যার কোনো অধিকার তার নেই।
১ জানুয়ারি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তাদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ভাইস চ্যান্সেলর ইমরান রহমানের পদত্যাগ এবং ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) থেকে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠদের অপসারণ।
ইউল্যাবের ১১ সদস্যের বোর্ডে ছয়জন জেমকন গ্রুপের পরিবারের সদস্য। ইউল্যাব বোর্ডের সভাপতি কাজী আনিস আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন এবং শেখ হাসিনার প্রপাগান্ডা টিমের অন্যতম নেতা। তার বড় ভাই কাজী নাবিল আহমেদ আওয়ামী লীগের তিনবারের সংসদ সদস্য।
কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আইইউবি, এনএসইউ, এআইইউবি-তে যা হয়েছে, তার বিপরীতে ইউল্যাবের ভাইস চ্যান্সেলর ইমরান রহমান অ্যালামনাই, শিক্ষক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন এবং ২০১৬ সালে মুহাম্মদ ইউনুসকে ইউল্যাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। তার এসব সমালোচনার জন্য জেমকন পরিবার ২০২৪ সালে জানিয়ে দেয় যে তার চুক্তি নবায়ন করা হবে না।
৩ জানুয়ারি, হান্নান যেন মাফিয়া ডনের মতো ইউল্যাবে প্রবেশ করে। সেখানে একটি বৈঠকে অংশ নেয়, যার কোনো অধিকার তার ছিল না। এরপর সে ইউল্যাব রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দেয়। তারপর জেমকন পরিবারের সদস্যদের অপসারণের দাবি হঠাৎ করেই তার তালিকা থেকে বাদ পড়ে। বিশেষ করে হাসিনার প্রিয় নাবিল ও আনিসকে বাঁচিয়ে দেয় হান্নান। অন্যদিকে জনপ্রিয় ভাইস চ্যান্সেলরকে সরিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব তুলে দিয়ে বিষয়টির অদ্ভুত সমাধান করে সে। অথচ পাঁচ দিন আগেই শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো তাদের বোর্ড অব ট্রাস্টি ঠিক করবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা নেই।
হান্নান কোনো দিন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিল না। তাহলে কোন যুক্তিতে সে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে মাতাব্বরি করতে গেল? দিনের পর দিন নাটকীয় ফেসবুক লাইভ করলেই কি নেতৃত্বের যোগ্যতা হয়? জেমকন পরিবার, যারা অর্থপাচার ও দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত, তাদের বিষয়ে সে চুপ কেন? তারা কি তাকে কিছু দিয়েছে? কত টাকা, মাসুদ?
আরেকটা প্রবাদ দিয়ে লেখাটা শেষ করি-আপনি যদি বীর হিসেবে মারা না যান, তাহলে বেঁচে থাকলে আপনি নিজেকে খলনায়ক হিসেবে আবিষ্কার করতে পারেন। নির্দোষ, দক্ষ ও জনপ্রিয় ভাইস চ্যান্সেলরকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দিয়ে হান্নান সেদিন সত্যিই নিজেকে কলঙ্কিত করেছে, পরিণত হয়েছে সত্যিকারের এক ফ্যাসিস্ট খলনায়কে!
এর পরপরই প্রতিক্রয়া জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন আবদুল হান্নান মাসউদ: জুলকারনাইন সায়ের ভাই ইউল্যাব (ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ) ইস্যুতে আমাকে নিয়ে বড় একটা প্যারাগ্রাফ লিখেছেন। ধন্যবাদ জানাই ভাইকে, তবে আরো বেশি ইনফরমেটিভ হওয়া উচিত ছিলো।
ভাই অসাধারণ লিখেন, কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদী গভর্নিংবডির পক্ষে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছিলো। জাস্ট তাদের জিজ্ঞাসা করলেই হয়তো পেয়ে যেতেন আমি কতটা বোল্ডলি এ গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম এবং আমার বোল্ড অবস্থানের কারণে তারা সেখান থেকে সরেও দাঁড়ায়।
সেখানে গিয়েছিলাম অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে, আর তাদের প্রতিনিধি হিসেবেই আমি মধ্যস্থতা করি। আর তাছাড়া ইউজিসি গভর্নিংবডি এবং ভিসির বিষয়ে তদন্ত করার ব্যাপারে কথা হয়।
আর ভিসি নিজেই অনশন ভাঙানোর স্বার্থে নিজ থেকে অফিস না করার সিদ্ধান্ত নেয়। যারা গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, তাদের জিজ্ঞাসা করলেই ভাই সত্যতা পেয়ে যেতেন।
শ্রদ্ধার সাথে ভাইকে বলবো, পুরো বিষয়টা আরেকবার তদন্ত করে দেখুন। সত্যতা পেয়ে যাবেন। তাছাড়া যে ডকুমেন্টটা ভাই শেয়ার করেছেন তা ভুয়া ডকুমেন্ট। আসল ডকুমেন্টটা আমার কাছে নেই, ভাই চায়লে ইউল্যাব এর ভিসি মহোদয় কিংবা আন্দোলনকারী যেকারো থেকে চেয়ে নিতে পারেন।
আর দোসরা আগস্ট নিয়ে লিখবো আরেকদিন.....