মাগুরার শালিখায় দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ। কম পরিশ্রম ও স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ার পাশাপাশি পোকার উপদ্রব কম থাকা ও চারাগাছ নষ্ট না হওয়ায় উপজেলার আড়পাড়া,তালখড়ি, ধনেস্বরগাতী, গঙ্গারামপুর, বুনাগাতীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা মালচিং পদ্ধতি টমেটো, বেগুন, মরিচ, শসা, করলা, এবং অন্যান্য সবজি চাষ করে অধিক লাভ করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ ছর ৮ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে যা গত বছরের চেয়ে ৩ হেক্টর বেশি। কম পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় দিনে দিনে সবজি চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মালচিং পদ্ধতি।
মালচিং হলো মাটির উপরে একটি আচ্ছাদন বা ঢাকনা (মালচ) ব্যবহার করা, যা প্লাস্টিক শিট, বাঁশের চটা, খড়, শুকনো পাতা, অথবা নারকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। এই আচ্ছাদনটি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা, মাটির উর্বরতা বাড়ানো, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ,পোকামাকড় ও রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফসলের গুণগত মান উন্নয়ন করে। বিশেষ করে উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় মালচিং পদ্ধতি চাষিদের জন্য একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মাটিকে সরাসরি রোদ ও বৃষ্টির প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এটি একবার তৈরি করে দুই বার ব্যবহার করা যায় বলে সবজি চাষে মালচিংএ ঝোঁক বাড়ছে অধিকাংশ চাষিদের। শালিখায় বর্তমানে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ একটি জনপ্রিয় ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার আড়পাড়া, তালখড়ি, ধনেস্বরগাতীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি মাটি দলা করে কালো পলেথিন দিয়ে ঠেকে দিয়ে চারা রোপণের জন্য ছোট ছোট ছিদ্র কেটে বেড তৈরি করা হচ্ছে। যার উপরে বাঁশ,সুতা ও জাল দিয়ে আচ্ছাদন করা হচ্ছে। আর তৈরি করা ঐ বেডে মধ্যে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা আনা টমেটো, শসা, মরিচ, বেগুন, করলাসহ নানা ধরনের সবজি। এমন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য চাষিরাও ফসল চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। মূলত রবি মৌসুমে জমিতে পানির স্বল্পতা থাকায় এই মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
শালিখা উপজেলার চুকিনগর গ্রামের চাষি আবুল হোসেন বলেন, রংপুর থেকে বাহুবলি টমেটোর চারা এনে ৪০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ৩৭ শ চারা রোপণ করেছি যেখানে খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। ফলন ভালো হলে এখান থেকে ১০ গুন টাকা আয় করা যাবে।
তালখড়ি গ্রামের সবজি চাষী আকিদুল মিয়া বলেন, এ বছরই প্রথম ৫০ শতাংশ জমিতে টমেটো ও ২৫ শতাংশ জমিতে কফি লাগিয়ছে। আশা আছে আগামী বজর আরো অধিক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করব।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেখানে পানির সাশ্রয় এবং মাটির উর্বরতা রক্ষা প্রয়োজন, সেখানে এই পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মালচিং পদ্ধতি সবজি চাষে আধুনিক প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু উৎপাদন বাড়ায় না, বরং খরচ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার পথ সুগম করে। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব আনা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন বলেন, বর্তমানে উৎপাদিত প্রায় সকল সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে মাটির কাঙ্খিত আদ্রতা বজায় থাকে, রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ কম হয়, পরিচর্যার জন্য তেমন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না বলে উৎপাদন খরচ কম হয় ফলে লাভ বেশি হয়। এজন্য আমারা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপদ উপায়ে সবজি চাষের জন্য মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।
কেকে/এএম