কথাসাহিত্যের একটি উজ্জ্বল ধারা ছোটগল্প। আকারে ছোট হলেই তাকে ছোটগল্প বলা যাবে না। ছোটগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিন্দুতে সিন্ধুর বিশালতা। ছোটগল্পে উপন্যাসের বিস্তার থাকে না, থাকে ভাবের ব্যাপকতা। উপন্যাস পড়ে পাঠক তৃপ্তি লাভ করে, ছোটগল্পে পায় কোনো ভাবের ইঙ্গিত। ক্ষুদ্র কলেবরে নিগূঢ় সত্যের ব্যঞ্জনায়ই এর সার্থকতা।
ছোটগল্পের কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—এর ক্ষুদ্র পরিসরের মাঝে বৃহৎয়ের ইঙ্গিত, এর আরম্ভ ও উপসংহার হয় নাটকীয়, এর বিষয়বস্তু সাধারণত স্থান, কাল ও ঘটনার ঐক্য মেনে চলে, এতে মানবজীবনের কোনো একটি বিশেষ মুহূর্ত, ভাব বা চরিত্রের একটি বিশেষ দিক উজ্জ্বল হয়, যেকোনো ধরনের বাহুল্য বর্জনের মাধ্যমে গল্প হয় রসঘন। এতে থাকে রূপক বা প্রতীকের মাধ্যমে অব্যক্ত কোনো বিষয়ের ইঙ্গিত।
আধুনিক ছোটগল্পের জনক অ্যাডগার অ্যালেন পো বলেন, আ ব্রিফ প্রোজ ন্যারেটিভ রিকোয়ারিং ফ্রম হাফ অ্যান আওয়ার টু ওয়ান অর টু আওয়ারস ইন ইটস পেরুজাল। ছোট গল্প প্রসঙ্গে হাডসন বলেন— আ শর্ট স্টোরি ইজ আ স্টোরি দ্যাট ক্যান বি ইজিলি রিডস অ্যাট আর সিংগাল সিটিং।
বাংলা ছোটগল্পের জনক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘সোনারতরী’ কাব্যগ্রন্থের ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় ছোটগল্পের লক্ষণসহ সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন:
ছোট প্রাণ ছোট কথা
ছোট ছোট দুঃখব্যাথা
নিতান্তই সহজসরল।
সহস্র বিস্মৃতিরাশি
প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু-চারটি অশ্রুজল
তারি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।
অধ্যাপক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এই কবিতাংশের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, খাঁটি ছোটগল্পের এই হল সহজসুন্দর কাব্যিক ব্যাখা। ছোট প্রাণ ছোট ব্যথাই তার উপজীব্য। কিন্তু গোষ্পদে যেমন আকাশের ছায়া পড়ে তেমনি একটুখানি ক্ষুদ্র চিত্রপটের মধ্যেই বিশালব্যাপ্ত মহাজীবনের ছায়া পড়বে। তত্ত্ব থাকবে, তাত্ত্বিকতা বড় হয়ে উঠবে না। ফুলের গায়ে গন্ধের মতই তা অবিচ্ছিন্ন হয়ে বিরাজ করবে। কাহিনির ধূপ নিভে যাবে, কিন্তু তার ভাবের সৌরভটি মোহ বিস্তার করতে থাকবে ধীরে ধীরে। অতএব লেখকের কলম যেখানে থেমে দাঁড়াবে, সেইখান থেকেই পাঠকের মনে গল্পটি সঞ্চারিত হয়ে চলবে।
সম্প্রতি বাংলা সাহিত্যে অণুগল্প নামে সাহিত্যের একটি ধারা প্রতিষ্ঠার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলা, আসাম এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা বাংলাভাষাভাষির কথাসাহিত্যিকদের অণুগল্প চর্চা করতে দেখা যায়। এদেশে বিভিন্ন দৈনিকের সাহিত্য পাতায় অণুগল্প প্রকাশিত হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই।
তবে অদ্যাবধি কোথাও অণুগল্পের সুনির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট্য নির্ণীত হয়নি। এর সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বা শব্দ পরিসর এখনো নির্ধারিত হয়নি। কোনো কোনো পত্রিকার সাহিত্য পাতায় অনধিক ৩০০ শব্দে অণুগল্প প্রকাশিত হয়। কোনো পত্রিকায় ৫০০ শব্দের অণুগল্পও প্রকাশিত হতে দেখা যায়। এতে অনুমিত হয় যে, পত্রিকার বিজ্ঞ সাহিত্য সম্পাদকগণ হয় ভালো মানের অণুগল্প পান না, নয় তো এ বিষয়ে ধোঁয়াশায় আছেন।
বনফুলের ‘নিমগাছ’ নামের গল্পটিই হতে পারে অণুগল্পের শ্রেষ্ট উদাহরণ। অণুগল্পের সময় তথা শব্দ পরিসর, ঝলক প্রসঙ্গ, সংক্ষিপ্ততা, শুরু ও শেষে নাটকীয়তা ইত্যাদি থাকা বাঞ্চনীয়। অণুগল্পের সংক্ষিপ্ততা এবং ঝলক বিষয় বিবেচনায় গল্পের দাবির প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট সময় পরিসর তথা শব্দ পরিসর থাকা দরকার।
আমরা জানি, আমাদের আধুনিক সাহিত্য রচিত হয় পাশ্চাত্য সাহিত্যের ভাবধারায়। ইংরেজি তথা বিশ্বসাহিত্যে ছোটগল্পের দুটি ধারা রক্ষ করা যায়। যথা—১. ছোটগল্প: ২০০১ শব্দ থেকে ১০০০০ শব্দসীমা পর্যন্ত গল্প। ২. ঝলকগল্প: ৬ শব্দ থেকে ২০০০ শব্দ পর্যন্ত।
অন্যদিকে ঝলকগল্প হল ছোট গল্প লেখার একটি রূপ যা সীমিত সংখ্যক শব্দের মধ্যে একটি পাঞ্চ প্যাক করে। এটি এমন একটি ধারা যা লেখকদের সংক্ষিপ্ত হতে চ্যালেঞ্জ করে, যা তাদের পাঠকদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা বা আবেগ প্রকাশ করে। উপরন্তু, ফ্ল্যাশ গল্প নতুন ধারণা তৈরি করতে বা লেখকের বৃত্তাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে। কারণ এই ধারার সংক্ষিপ্ততার চর্চার কিছু অন্বেষণের প্রেরণা দেয়। ছোটগল্পের যেমন আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, তেমনি আছে ঝলকগল্পেরও।
ঝলকগল্পের শিল্পরূপ সম্পর্কে বলা যায়, এর সৌন্দর্য গল্পের সংক্ষিপ্ততায়। যা লেখকদের বাধ্যতামূলকভাবে মাত্র কয়েকশ শব্দের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ আখ্যান তৈরি করতে দেয়।
ঝলকগল্প ধারায় লেখার কৌশল বড় ভূমিকা পালন করে। পাঠকের সাথে সংবেদনশীল সংযোগ তৈরি করার সময় লেখককে কেবল অপর্যাপ্ত শব্দ দিয়ে একটি সম্পূর্ণ গল্প বলতে সক্ষম হতে হবে। একটি অনন্য এবং চিত্তাকর্ষক গল্প নিয়ে আসার জন্য সৃজনশীল অনুপ্রেরণাও প্রয়োজন, যা পাঠককে ব্যস্ত রাখবে।
ঝলকগল্প লেখার ক্ষেত্রে প্রাণবন্ত ভাষা এবং সংবেদনশীল বিবরণ ব্যবহার করা ঝলক গল্পের তীব্রতাও এর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। প্রাণবন্ত ভাষা এবং সংবেদনশীল বিবরণের ব্যবহার পাঠকের উপর একটি শক্তিশালী সংবেদনশীল প্রভাব তৈরি করতে পারে। উপরন্তু, একটি মোচড় দেওয়া সমাপ্তি ঝলকগল্পের একটি বৈশিষ্ট্য। শেষের দিকে অপ্রত্যাশিত টুইস্ট বা মোচড় পাঠকের উপর স্থায়ী ছাপ ফেলতে পারে, গল্পটিকে স্মরণীয় এবং প্রভাবশালী করে তুলতে পারে।
গতিশীল ভুবনে যখন কথাসাহিত্য লেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই, তখন ঝলকগল্প চর্চার প্রচেষ্টায়, এ ধারার সৃজনশীলতায় অনেক দূর নিয়ে যাবে।
ঝলকগল্প লেখার কৌশলই আলাদা। সীমিত শব্দ সংখ্যায় একটি দুর্দান্ত গল্প বলার জন্য ঝলক গল্পগুলির কয়েকটি মূল উপাদান প্রয়োজন।
প্রথমত, গদ্যভাষা টাইট বা কমপেক্ট হওয়া উচিত। এর অর্থ প্যাসিভ ভয়েসের পরিবর্তে সক্রিয় ভয়েস ব্যবহার করা। অপ্রয়োজনীয় শব্দ, বিশেষ করে ক্রিয়াবিশেষণ ত্যাগ করা। পাঠকের মনে একটি ইমেজ তৈরি করতে পাওয়ার ক্রিয়া ব্যবহার করার দিকে মনোনিবেশ করা।
দুর্দান্ত ঝলক কল্পকাহিনীকেও ঠিক কার্যকরভাবে শুরু করতে হবে এবং যতটা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় পটভূমির তথ্য মুছে ফেলতে হবে। প্রদত্ত কাঠামোর মধ্যে অর্থ পূরণ করতে পারে পাঠককের মনে এমন আস্থার জায়গা সৃষ্টি করতে হবে।
ঝলক গল্পে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যিক ডিভাইস অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যেমন—চিত্রকল্প, প্রতীকবাদ, জুক্সটাপজিশন এবং রূপক।
এই ডিভাইসগুলি পাঠককে গল্পে টানতে এবং মর্মস্পর্শীতা তৈরি করতে সহায়তা করে। জুক্সটাপজিশন হলো—তুলনা বা বৈসাদৃশ্য বা একটি আকর্ষণীয় প্রভাব তৈরি করার জন্য প্রায়শই দুই বা ততোধিক জিনিসকে পাশাপাশি রাখার একটি উদাহরণ।
ঝলক কল্পকাহিনীতে প্রায়শই একটি প্লট টুইস্ট বা অবাক করা সমাপ্তি দেখা যায়, যেমনটি আমরা ‘বেবি শু’ বা ‘নিমগাছ’ উদাহরণে দেখেছি। অথবা গল্পের শেষ বাক্যটি প্রথম বাক্যটির বিপরীত হতে পারে। এটি লেখককে সংক্ষিপ্ত শব্দ গণনার মধ্যে প্লটের গতিবিধি অর্জন করতে সহায়তা করে।
সময় বা শব্দ পরিসর বিবেচনায় ঝলকগল্পের কয়েকটি প্রকারভেদ আছে। সেসব শ্রেণি বিবেচনায় অণুগল্প ন্যানো ফিকশনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এসব বিবেচনায় একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, অণুগল্প হলো ঝলকগল্পের শ্রেণিভুক্ত একটি ধারা।
ঝলকগল্প সাধারণত ছয় প্রকারের—
১. আকস্মিক কথাসাহিত্য/ছোট গল্প: আকস্মিক কল্পকাহিনী এবং ছোট ছোট গল্পগুলি প্রায় ৭৫০ থেকে ১,০০০ শব্দের ফ্ল্যাশ ফিকশনের দীর্ঘ অংশকে বোঝায়। এবং ২,০০০ পর্যন্ত শব্দের গল্পও এ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
২. পোস্টকার্ড কথাসাহিত্য: পোস্টকার্ড কথাসাহিত্য বলতে যা শোনায় তা-ই এমন একটি গল্প যা পোস্টকার্ডের মতো স্বল্প পরিসরে লেখা যেতে পারে। এটি সাধারণত প্রায় ২৫০ শব্দ কিংবা ৫০০ বা ২৫ শব্দেরও মতো হতে পারে।
৩. মাইক্রোফিকশন/ন্যানোফিকশন: মাইক্রোফিকশন এবং ন্যানোফিকশন ফ্ল্যাশ ফিকশনের সংক্ষিপ্ত রূপ বর্ণনা করে, ৩০০ শব্দ বা তার কম শব্দসীমায় এ ধারার গল্প রচিত হয়। মাইক্রোফিকশনের মধ্যে ড্র্যাবল, ড্রিবল এবং ছয় শব্দের গল্পের মতো ফর্ম রয়েছে। এ ধারার ক্ষুদে গল্পকে অনুগল্প অভিধায় অভিহিত করা যায়।
৪. ড্রেবল: ড্র্যাবল ঠিক ১০০ শব্দের একটি গল্প (শিরোনাম সহ নয়)। ফর্মটি সংক্ষিপ্ত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, একটি ভালো গল্পের মূল বিষয় এড়ানো যায়। এটির একটি শুরু, মধ্য এবং শেষ থাকা উচিত এবং এতে দ্বন্দ্ব এবং সমাধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
৫. ড্রিবল/মিনি-সাগা: যখন একটি ড্রেবল লেখা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং না হয়, একটি ড্রিবল লেখার জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে, যা ঠিক ৫০ শব্দে বলা একটি গল্প।
৬. ছয় শব্দের গল্প: ছয় শব্দের গল্পও লেখার চেষ্টা করা যায়। এটি সহজ নয়, তবে ফ্ল্যাশ ফিকশন আগ্রহীদের মতে, ছয়টি শব্দে দ্বন্দ্ব এবং রেজোলিউশনসহ একটি সম্পূর্ণ গল্প লেখা সম্ভব। ছয়-শব্দের গল্পের সবচেয়ে সুপরিচিত উদাহরণ, প্রায়শই আর্নেস্ট হেমিংওয়েকে উল্লেখ করা হয়, ‘বিক্রয়ের জন্য: শিশুর জুতা, পরা হয়নি’।
ক্রাইস্টাল এন. ক্রাইকের ফ্লাশ ফিকশনকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যেমন—
১. ছয় শব্দের গল্প
২. ড্রেবল: ১০০ শব্দ বা তার চেয়ে কম শব্দ
৩. টুইটার ২৮০ অক্ষর বা তার কম
৪. হঠাৎ কল্পকাহিনী ৭৫০শব্দ বা তার চেয়ে কম
৫. ফ্ল্যাশ ফিকশন ১৫০০ শব্দ বা তার কম
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ এর মতে ফ্ল্যাশ ফিকশন একটি সংক্ষিপ্ত কাল্পনিক আখ্যান যাতে চরিত্র এবং প্লট বিকাশিত হয়। শব্দ গণনা দ্বারা এসব ঝলক গল্পের শেণি বিভাগ করা হয়েছে।
যেমন: ১. ছয়-শব্দের গল্প; ২৮০-শব্দের গল্প। এটি ‘টুইটার’ নামেও পরিচিত; ২. ড্রিবল : মিনিসাগা নামেও পরিচিত, ৫০ শব্দ সীমায় এমন গল্প লেখা হয়।; ৩. ড্র্যাবল : ১০০ শব্দের গল্প ‘মাইক্রোফিকশন’ নামেও পরিচিত; ৪. আকস্মিক কল্পকাহিনী: ৭৫০ শব্দ; ৫. ফ্ল্যাশ ফিকশন: ১,০০০ শব্দের গল্প।
উপরের প্রকারভেদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ছয় শব্দ থেকে শুরু করে ২০০০ পর্যন্ত শব্দের পরিসরে ফ্ল্যাশ ফিকশন বা ঝলকগল্প রচিত হয়।
আধুনিক বাংলাসাহিত্যে ফ্ল্যাশ ফিকশনের ধারায় রবীন্দ্র-নজরুল-সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ-বনফুলসহ প্রতিষ্ঠিত অনেক গল্পকারই এই ধরার গল্প লিখেছেন। সম্প্রতি বাংলায় ভাষায় অনেকেই ফ্ল্যাশ ফিকশন লিখছেন। পত্র পত্রিকায় স্থানাভাবে যে সব অতি ছোট আকারের গল্প প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলোর অনেক গল্পই ফ্ল্যাশ ফিকশনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হচ্ছে।
মোজাফফর হোসেন রচিত ‘পাঠে বিশ্লেষণে বিশ্বগল্প, ছোটগল্পের শিল্প রূপান্তর’ গ্রন্থে ‘বিশ্বসাহিত্যে অণুগল্প’ নামে একটি অধ্যায় রয়েছে। এতে বিশ্বসাহিত্যের ফ্ল্যাশ ফিকশনকে ‘অণুগল্প’ বলা হয়েছে। অধ্যায়টিতে অণুগল্পের বৈশিষ্ট্য, শিল্পকৌশল প্রকারভেদ আশানুরূপ স্পষ্ট করা হয়নি। অধিকন্তু অণুগল্পের শব্দসীমা অনধিক এক হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপর দিকে এই নিবন্ধকার রচিত ‘ফ্ল্যাশ ফিকশন— স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ ধারা’ নামে ২২ জুন, ২০২৪ তারিখে দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত প্রবন্ধে (পরে যেটি ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রবন্ধ’ গ্রন্থে সূচিবদ্ধ হয়) ঝলকগল্পের শব্দসীমা ২০০০ সহ নানাদিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে মে, ২০২৩ মাসে সিদ্ধার্থ সিংহের ৪০০টি গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘চোর ধরার মেশিন এবং ৩৯৯’ নামে ঝলক-গল্পের বই। বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে লেখক জানান, তাঁর নতুন বইয়ের ৪০০টি ‘ঝলক-গল্পই ৪০০ রকমের। কোনওটার সঙ্গে কোনওটার সামান্যতমও মিল নেই। আকারে অণুগল্পের মতো দেখতে হলেও এগুলো অণুগল্প নয়। অণুগল্পের চেয়েও অনেক অনেক বেশি চমকপ্রদ, মর্মস্পর্শী এবং বুদ্ধিদীপ্ত।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে এ নিবন্ধকার মনে করে অণুগল্প এবং ঝলকগল্পের মধ্যে আঙ্গিকগত দিক এক নয়। বরং এ কথা বলা যায় যে, ঝলকগল্পের শ্রেণিভুক্ত এক বা একাধিক প্রকারভেদের অন্তর্ভুক্ত ধারা হলো অণুগল্প।
তথ্যসূত্র:
১। পাঠে বিশ্লেষণে বিশ্বগল্প, ছোটগল্পের শিল্প ও রূপান্তর- মোজাফফর হোসেন।
২। বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রবন্ধ।
৩। অন্তর্জাল।
কেকে/এএম