আলোচনা-সমালোচনার পরও গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের বিএনপি ও জামায়াতে আশ্রয়দান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কুমিল্লায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা জামায়াতের সভাপতির পদ পেয়েছেন। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হয়েছেন কৃষক দলের সভাপতি। একইভাবে কালাইয়ে কৃষক দলের কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন আরেক আওয়ামী লীগ কর্মী।
কুমিল্লায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জামায়াতের সভাপতি
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু হানিফ একই ওয়ার্ডের জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি নির্বাচন হয়েছেন।
জানা গেছে, এ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামীর কোনো ওয়ার্ড কমিটি ছিল না। আওয়ামী লীগ পতনের পর জামায়াত উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলোতে কমিটি গঠন করা শুরু করে। গতকাল শুক্রবার সকালে প্রকাশ্যে আসে আবু হানিফ জামায়াতের ওয়ার্ড সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কথা। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সভাপতি নির্বাচন হওয়ার একটি পোস্টর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ওই পোস্টের মন্তব্যে নজরুল ইসলাম লিখেছেন, জামায়াতে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই সভাপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রথমে সমর্থক, তারপর কর্মী। ধারাবাহিকভাবে এসব ধাপ পার হতে হবে। ওয়ার্ড সভাপতি হতে হলে তাকে কর্মী হতে হবে প্রথমে।
একই পোস্টের মন্তব্যে আব্দুল আল মানিক লিখেছেন, জামায়েত এমন একটা দল হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। তারা আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে কমিটি করে তারা ক্ষমতার লোভে পাগল হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে হানিফ বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। তাই ওয়ার্ডের অবকাঠামো উন্নয়নে আমি আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। এখন আমি জামায়াতে ইসলামী ওয়ার্ড সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি।
কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুল মতিন বলেন, আবু হানিফ মেম্বার হওয়ার ১০ বছর আগে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পার জোর করে তাকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছে। মূলত তিনি আমাদের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
তাড়াশে কৃষক দলের সভাপতি হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে উপজেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি গোপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে ৮ ইউনিয়নের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেন পদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং দেশিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গত শনিবার দুপুরে তাড়াশ প্রেস ক্লাব চত্বরে কৃষক দলের ইউনিয়ন কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি স.ম আফছার আলী ও সাধারণ সম্পাদক এ টি এম আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিন সদস্য বিশিষ্টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
তদন্ত কমিটিতে তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. দুলাল হোসেন আহ্বায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান সবুজ এবং প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক মো. আব্দুল মালেককে সদস্য করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা দেশিগ্রাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বাছেদ আলীকে ওই ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি করা হয়েছে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে তাড়াশ এবং সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন দেশিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কালাইয়ে কৃষক দলের উপজেলা কমিটিতে আ.লীগের কর্মী
জয়পুরহাটের কালাইয়ে মো. নুর নবী নামে আওয়ামী লীগের কর্মীকে উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মো. সেলিম রেজা ও সদস্যসচিব কাজী মো. মনজুরে মওলা স্বাক্ষরিত ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে ১৯ নম্বর সদস্য হিসেবে নুর নবীর নাম দেখা যায়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর নেতাকর্মীরা সমালোচনা শুরু করেন এবং তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
নুর নবী উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের দুধাইল নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নুর নবীর বিরুদ্ধে কিডনি পাচারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এক যুগের ব্যবধানে তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। কয়েক দিন আগেও তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খোলস পাল্টে বিএনপি সেজেছেন।
কেকে/এআর