রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫,
৬ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English

রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: জিয়াউর রহমানের কবরে বিএনপির বিশেষ মোনাজাত ও শ্রদ্ধা নিবেদন       সংস্কারের সাথে নির্বাচনের বিরোধ নেই: মির্জা ফখরুল      সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা      তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে আবেদনের শুনানি পিছিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি      অর্ধলাখ নিহতের পর আজ থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর      ওষুধের দামে নৈরাজ্য      বাংলাদেশি-ভারতীয় মুখোমুখি       
খোলাকাগজ স্পেশাল
ওষুধের দামে নৈরাজ্য
শিপার মাহমুদ
প্রকাশ: রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯:৪৮ এএম আপডেট: ১৯.০১.২০২৫ ১২:২৭ পিএম  (ভিজিটর : ৪৩)
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

গত এক বছরে দেশে ওষুধের দামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে দাম বাড়ানোর প্রবণতা। একদিকে বাড়ছে চিকিৎসার খরচ, অন্যদিকে বেশির ভাগ ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে নতুন করে ভ্যাট যুক্ত হওয়ায় জনগণের ওপর বেড়েছে আরো আর্থিক চাপ।  যদিও ওষুধের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। উপদেষ্টা বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখতেই বিভিন্ন খাতে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়। তবে ওষুধের বিষয়ে আমরা প্রথমেই আলোচনা করেছিলাম। আশা করি অর্থ মন্ত্রণালয় তা বিবেচনা করবে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, কাঁচামালের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যা তাদের দাম বাড়ানোর কারণ। তবে ভোক্তারা বলছেন, এই যুক্তি দিয়ে নৈরাজ্যের পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না।

রাজধানী উত্তরায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের পাশে একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসেন সেলিম উদ্দিন নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমার মায়ের ডায়াবেটিস ওষুধ আগে মাসে ১৫০০ টাকায় হয়ে যেত। এখন সেটার জন্য প্রায় ২২০০ টাকা লাগে। দাম এত বেড়ে গেছে যে, চিকিৎসা চালানো মুশকিল। কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে, অথচ প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’ শাহানা বেগম নামে আরেক গৃহিণী বলেন, ‘আমার স্বামী হার্টের রোগী। তার প্রতিদিনের ওষুধে যে টাকা লাগে, সেটা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমাদের বাড়ির খরচ কমিয়ে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন এভাবে চলবে কীভাবে?’

এ ছাড়া ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ফার্মেসি মালিকরাও। মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গ্রাহকরা আমাদের দোষ দেন, কিন্তু আসল সমস্যা হলো কোম্পানির দাম বৃদ্ধি। আমরা নিজেরাও বিপদে আছি। নতুন স্টক আনতে আগের চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়। অথচ ক্রেতারা ভাবে আমরা ইচ্ছা করে দাম বাড়াই।’

নাসির উদ্দিন নামে আরেকজন ব্যবসায়ী একই অভিযোগ করে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যখন ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়, তখন আমরা বাধ্য হয়ে সেই দামেই বিক্রি করি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো। না হলে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরাও লোকসানে পড়বে।’ এ সময় তাদের লাভের পরিমাণ খুব কম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা আমাদের কাছে এসে রাগ করেন। অথচ দাম বাড়ার জন্য আমরা দায়ী নই। কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেয়, এরপর দাম বাড়ায়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি কম থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, চিকিৎসার খরচ আরো বেড়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়তে থাকবে।

তথ্য বলছে, গত এক বছরে কিছু ওষুধের দাম গড়ে ৪০ শতাংশ বা তারও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ব্যথানাশক, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এবং সাধারণ ঠান্ডাজ্বরের ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অনেক রোগীর জন্য নিয়মিত ওষুধ কেনা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যথানাশক ওষুধ ‘টোরাক্স’ (কিটোরোলাক ট্রোমেথামিন) ১০ মিলিগ্রামের ৫০টি ট্যাবলেটের একটি প্যাকেটের দাম আগস্ট ২০২৪-এ ছিল ৬০০ টাকা, যা বেড়ে ১ হাজার টাকা হয়েছে। এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালসের চুলকানির ওষুধ ‘টেট্রাসল’ শতাংশ সলিউশনের (৩০ এমএল) বোতলের দাম ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে ১২৫ টাকা হয়েছে, যা প্রায় ৮৪  শতাংশ বৃদ্ধি। বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ‘ডক্সোভেন’ (ডক্সোফাইলিন) ২০০ মিলিগ্রামের এক প্যাকেট ট্যাবলেটের দাম ৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে, যা প্রায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য ওষুধের দাম সহনীয় রাখতে বিশেষ নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এ নিয়ে রেডিয়েন্ট ফার্মার চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা ওষুধের মূল্য নির্ধারণের একটা যৌক্তিক নীতি সরকারিভাবে প্রণয়ন করতে না পারব; ততক্ষণ পর্যন্ত ওধুধের মূল্য সংক্রান্ত এ বিতর্কের অবসান হবে না।’

এদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. আকতার হোসেন জানিয়েছেন ‘ভ্যাট যাই হোক, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে ওষুধের দাম কমানোর আলোচনা চলছে।’

কেকে/এআর
আরও সংবাদ   বিষয়:  ওষুধে ৪০ শতাংশ   ওষুধ   ব্যথানাশক  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শঙ্খ-শাঁখায় অভিজিৎ ঘোষের বাজিমাত!
গাজায় যুদ্ধবিরতি স্থগিত করলো নেতানিয়াহু
শাবির ‘নারায়ণগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি শোয়াইব, সম্পাদক লিমন
যেকোনো মূল্যে দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
জিয়াউর রহমানের কবরে বিএনপির বিশেষ মোনাজাত ও শ্রদ্ধা নিবেদন

সর্বাধিক পঠিত

সীমান্তের ঘটনা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে বলেছে বিএসএফ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় ও বাংলাদেশিদের মধ্যে সংঘর্ষ
উদীচী গাজীপুর সংসদের সভাপতি রতিশ কুমার, সম্পাদক জাহাঙ্গীর
দেশের মানুষ ১ ইঞ্চি জমিও ভারতকে দখল করতে দেবে না: নুরুল হক নুর
গঙ্গাচড়ায় টিম জিয়ন ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ ও ক্রিকেট পিচ উদ্বোধন

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝