বাংলাদেশের নদীসমূহ বর্তমানে বিপজ্জনক স্বাস্থ্য সংকটের মুখে। বিশেষভাবে ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদী অবহেলার কারণে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে ।
রবিবার (১৯ জানুয়ারী) দুপুরে নদী রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের যথাযথ সংরক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বৈদ্যার বাজার নৌঘট সংলগ্ন এক বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘জলের কথা’ শিরোনামের এই সেমিনারের আয়োজন করেছে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি এবং পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির মহাসচিব মীযানুর রহমান এর সঞ্চালনায় সেমিনারে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন- সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার, মাসুম মেম্বার, দেলোয়ার হোসেন মেম্বার, ফজলুল হক ভূঁইয়া, মনির হোসেন, পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, পরিচালক প্রশাসন মো. রিয়াদ হোসেন (দাউদ)।
এদিনের আলোচনায় বক্তারা নদীগুলোর অবহেলা ও দূষণের কারণে পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, তা তুলে ধরেন। বিশেষ করে নদীজীবী সম্প্রদায়, যারা জীবিকার জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল, তাদের অবর্ণনীয় সংকটের কথা তুলে ধরেন বক্তারা।
অপরিকল্পিত নদী ব্যবহারের ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস, স্রোতের গতির পরিবর্তন, অবৈধ বালু উত্তোলন এবং শিল্প বর্জ্যের কারণে নদী পাড়ের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে পানির নিরাপত্তা, পরিবেশ ও মানুষের জীবনযাত্রা বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু সমাধান প্রস্তাব করেছেন- ১. অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা ২. শিল্প বর্জ্য যথাযথভাবে পরিশোধন করা ৩. জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ৪. শক্তিশালী পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন।
এছাড়া, সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা নদী রক্ষার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে নদী রক্ষায় সরকারের ভূমিকা আরও কার্যকর হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বক্তারা আরো জানান, নদীজীবী সম্প্রদায় ও তাদের জীবিকা রক্ষার জন্য সরকার, জনগণ এবং শক্তিশালী আইন প্রয়োজন। নদী রক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এক জেলে বলেন, বিষক্ত রাসায়ানিক বর্জ্যের কারণে মাছ শূন্য নদী তাই এই বিষক্ত রাসায়ানিক বর্জ্য বন্ধ না করলে নদীর মাছ চিরতরে বিলিন হয়ে যাবে।
সেমিনারটি সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং উপস্থিত সকলের মধ্যে নদী সংরক্ষণে একতাবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি এবং পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারটি নদী সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেকে/এজে