বলিউডের নবাব খ্যাত সাইফ আলি খানের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত চলাকালীন রোববার সকালের দিকে মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ভারতের পুলিশ। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি বাংলাদেশি নাগরিক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মুম্বাইয়ের একটি আদালতে মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদকে তোলার পর তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে অভিযুক্তের একজন আইনজীবী বলেছেন, গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বাংলাদেশি নাগরিক, এমন কোনও প্রমাণ নেই। বরং তিনি পরিবার-সহ সাত বছরের বেশি সময় ধরে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রোববার মহারাষ্ট্রের থানের থানের হীরানন্দনি এস্টেট থেকে শেহজাদকে গ্রেপ্তারের পরপরই পুলিশ জানায়, তিনি ছয় মাস আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তবে শেহজাদের আইনজীবী সন্দ্বীপ শেখানি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, তার মক্কেল পরিবারের সঙ্গে গত সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন।
আইনজীবী সন্দ্বীপ বলেছেন, শেহজাদকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত দেওয়া হয়েছে এবং আদালত এই সময়ের মধ্যে পুলিশকে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি যে বাংলাদেশি, এর পক্ষে কোনও প্রমাণ পুলিশের কাছে নেই। ছয় মাস আগে তিনি এখানে এসেছেন পুলিশের এমন দাবিও মিথ্যা। এটি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৩-এ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ এই মামলায় সঠিক তদন্ত করা হয়নি।
একই সঙ্গে আলোচিত এই মামলায় পদ্ধতিগত ত্রুটিরও অভিযোগ করেছেন আইনজীবী সন্দ্বীপ শেখানি। এছাড়া যে কারণে অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজত দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
আইনজীবী সন্দ্বীপ শেখানি বলেন, মামলায় ফাঁক-ফোকর আছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নোটিশ জারি হয়নি। পুলিশি হেফাজত দেওয়া হলেও রিমান্ড কপি বা এফআইআর কপিতে জীবনের হুমকি বা হত্যার হুমকির কোনও উল্লেখ নেই। তা সত্ত্বেও ধারাগুলো যুক্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনায় হত্যার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।
অভিযুক্ত শেহজাদের আরেক আইনজীবী দীনেশ প্রজাপতিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তার মক্কেল গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে পরিবারের সঙ্গে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন।
‘‘পুলিশ হেফাজতের দাবি করেছিল। কিন্তু হেফাজতে নেওয়ার জন্য যেসব কারণ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। আত্মপক্ষ সমর্থনে আমরা যুক্তি দিয়েছিলাম, তার কাছ থেকে কিছুই উদ্ধার করা হয়নি, এবং পুলিশ তাকে একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে প্রমাণ করে এমন কোনও নথিও আদালতের কাছে উপস্থাপন করেনি। তা সত্ত্বেও আদালত পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।’’
গত বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাসভবনে বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের বাসায় ডাকাতির উদ্দেশে প্রবেশ করেন শেহজাদ। এ সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সাইফ আলি খানকে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করেন তিনি। বলিউডের এই অভিনেতার ঘাড়ে ও মেরুদণ্ডের কাছে গুরুতর জখম হয়। বর্তমানে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা বলেছেন, সাইফ আলি খানের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
হামলার এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল কি না তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে মুম্বাই পুলিশ। একই সঙ্গে শেহজাদের কোনও সহযোগী ছিলেন কি না, সেটি জানতে বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কেকে/এজে