দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী উপজেলার জীবননগরে কৃষক পর্যায়ে বানিজ্যিকভাবে জিরার চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কৃষি উদ্যোগক্তা জাহিদুল ইসলাম। কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে জিরার চাষ করছেন তিনি। ইতোমধ্যে জিরার গাছগুলো বড় হয়ে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। সফলতার মুখ দেখবেন, এমনটি প্রত্যাশা করছেন তিনি। প্রতিনিয়ত কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়ায় হচ্ছে সার্বিক পরামর্শ।
সোমবার (২০ জানুয়ারী) সরজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সন্তোষপুর এলাকায় জিরা চাষে শ্রমিকেরা নানান কর্মব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছেন।
জানা গেছে, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী আকারে নিজস্ব ভাই ভাই কৃষি প্রজেক্টের ১১ শতক জমিতে বারি-১ জাতের জিরার চাষ করেন জাহিদুল ইসলাম। এখন শুধু গবেষণাগারেই নয়, কৃষক পর্যায়েও জেগেছে জিরা চাষে সম্ভাবনা। ফলে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা। আয় বাড়বে কৃষকের। কমবে আমদানি নির্ভরতা। দেশের চাহিদা মিটবে বলে মনে করেন স্থানীয় কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করলে বেকার যুবকেরা চাষে আগ্রহী হবে বলেই প্রত্যাশা করেন কৃষি উদ্যোগক্তারা।
কৃষি বিভাগ জানায়, বারি জিরা-১ জাতের জিরার গাছ লম্বায় ৪০-৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতার হয়। এর পাতার রং গাঢ় সবুজ। ফুলের রং গোলাপি। বাজারে বিক্রি হওয়া জিরার চেয়ে বেশি সুগন্ধি। ভালোভাবে চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫৫০ কেজি জিরার ফলন পাওয়া সম্ভব। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে জিরা অন্যতম। জিরা শীতকালীন মসলা জাতীয় ফসল। দেশে যে পরিমাণ জিরার চাহিদা তার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। অনেক গবেষণার ফলে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টায় কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের উপযোগী জিরার জাত আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। কৃষক পর্যায়ে চাষ উপযোগী এ জাতের জিরার।
কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জীবননগর কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের নভেম্বর মাসে জমিতে বেড করে জিরার বীজ বোপন করি।বীজ বোপনের তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে ঘরে তুলতে। এখন গাছে ফুল এসেছে এবং ফল আসতে শুরু করেছে। আল্লাহর রহমতে আশা করছি, মাস খানেকের মধ্যেই জিরা সংগ্রহ করতে পারব।' তিনি আরও জানান, জিরা চাষ বিষয়ে বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাঁর প্রজেক্টে জিরার পাশাপাশি ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন ফসলের চাষও করা হচ্ছে।অল্প সময়ে স্বল্প খরচে দেশের মাটিতে এমন দামী ফসল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবানও হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলার উথলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাাপতি সেলিম রেজা জানান, কৃষি অফিসের সহায়তায় স্বল্প পরিসরে এবার প্রথম জিরার চাষ করেছেন জাহিদুল। এখন পর্যন্ত জিরার ভালো আছে। ঘন কুয়াশা ছাড়া ক্ষতির আর কোনো আশঙ্কা নেই। আগামীতে কৃষি বিভাগ থেকে সাহায্য সহযোগিতা পেলে এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে জিরার চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। একদিকে বেকার সমস্যা সমাধান হবে অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, উপজেলায় প্রথমবারের মতো জিরার চাষ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি জায়গায় চাষ করা হয়েছে। তবে অন্য দুটি জায়গার তুলনায় জাহিদুল ইসলামের জমির ফসলের অবস্থা ভালো। আমরা আশাবাদী, সফলতা আসবে।আশা করছি ফলন ভালো হলে আগামীতে জীবননগর জিরার চাষ বাড়বে। সফলতা পেলে আমদানির পরিমাণ কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কেকে/এমএস