১৯৯০ সালের পর প্রথমবারের মতো দারিদ্র্যের সংখ্যা কিছুটা কমলেও তা এখনও যথেষ্ট নয় তবে প্রতি বছরেই বেড়ে যাচ্ছে বিলিয়নিয়ারা।
২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২ লাখ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ২০২৩ সালের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এদিকে, আগের বছর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪ জন নতুন বিলিয়নিয়ার যুক্ত হয়েছিলেন।
আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের বৈষম্যবিষয়ক নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১৯৯০ সালের পর প্রথমবারের মতো দারিদ্র্যের সংখ্যা কিছুটা কমলেও তা এখনও যথেষ্ট নয়।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রকাশিত অক্সফামের প্রতিবেদন ‘টেকার্স নট মেকার্স’ বলছে, আগামী দশকের মধ্যে বর্তমান বিলিয়নিয়ারদের মধ্য থেকে অন্তত পাঁচজন ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, একজন ট্রিলিয়নিয়ার হতে পারেন। তবে এই সংখ্যা এখন বেড়ে পাঁচে পৌঁছেছে।
২০২৪ সালে বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ২০৪ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬৯ জনে। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৬৫ জন। তাদের সম্মিলিত সম্পদ এক বছরে ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ ব্যক্তির প্রতিদিনের গড় সম্পদ বৃদ্ধি ছিল প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার। এত সম্পদ থাকার পরেও তারা যদি হঠাৎ তাদের ৯৯ শতাংশ সম্পদ হারায়, তবুও তারা বিলিয়নিয়ার থেকে যাবেন।
অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ বেহার বলেছেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতি কিছু সুবিধাভোগীদের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে। একসময় যা অকল্পনীয় ছিল, এখন তা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিলিয়নিয়ারদের অবিশ্বাস্য সম্পদ বৃদ্ধির কারণে আমরা শীঘ্রই ট্রিলিয়নিয়ারদের দেখতে যাচ্ছি। তাদের কেবল সম্পদই বাড়েনি, বরং ক্ষমতাও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদের বড় অংশ আসছে উত্তরাধিকার, একচেটিয়া সুযোগ এবং প্রভাবশালী সম্পর্ক থেকে। তাদের মোট সম্পদের ৬০ শতাংশের উৎস এসব। ফোর্বসের গবেষণা অনুযায়ী, ৩০ বছরের কম বয়সী বিলিয়নিয়ারদের বেশিরভাগই তাদের সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। ইউবিএসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে বর্তমান বিলিয়নিয়ারদের প্রায় ১ হাজার জন উত্তরাধিকারীদের জন্য ৫.২ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদ রেখে যাবেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঔপনিবেশিক সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভারত থেকে বিপুল সম্পদ শোষণ করেছিল। ১৭৫৭ সালে ভারতের উপর ব্রিটিশ শাসন শুরু হয় এবং ১৯০০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেন ভারত থেকে প্রায় ৬৪.৮২ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে গেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সম্পদের মধ্যে ব্রিটেনের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তি ৩৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার ভোগ করেছেন। এই অর্থ এত বেশি যে ৫০ পাউন্ডের নোট দিয়ে লন্ডন শহর চারবার মোড়ানো সম্ভব।
অক্সফামের প্রতিবেদনে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমাতে বিভিন্ন দেশের জন্য নীতিগত সুপারিশও করা হয়েছে।
কেকে/এআর