নওগাঁর পোরশা উপজেলায় পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম। সড়ক ও ক্ষেতের পাশের পরিত্যাক্ত জায়গায় দেখা যাচ্ছে বিষাক্ত এই উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম। এতে হুমকিতে রয়েছে মানবদেহ, ফসল ও গবাদী পশু।
উপজেলার সারাইগাছী হতে মহাদেবপুর সড়কের ইলিমপুর এলাকা থেকে শিশা হাট পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে চোখে পড়ে এই বিষাক্ত উদ্ভিদ। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ফসলি জমির ধারে পতিত জায়গায় এই উদ্ভিদ দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, পার্থেনিয়াম একটি আগাছার নাম। দেখতে ধনিয়া গাছের মতো। যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচতে সক্ষম এ আগাছাটি। গাছটি বেড়ে উঠতে বা টিকে থাকতে কোনো ধরনের যত্ন বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অসখ্য শাখা ত্রিভুজের মতো ছড়িয়ে থাকে। ছোট ছোট সাদা ফুল হয়। গাছটি দেখতেও যেমন ধনিয়া গাছের মতো তেমনি ফুলটি দেখতেও ধনিয়া গাছের ফুলের মতো। বিষাক্ত গাছটি ৩মাসের মধ্যে ২৫হাজার পর্যন্ত বীজ জন্ম দিতে সক্ষম। আগাছাটি অত্যন্ত ভয়ংকর।
বিষাক্ত এ গাছের দ্বারা সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয় গবাদিপশু। পশু চরানোর সময় গায়ে লাগলে পশুর শরীর ফুলে যায়, জ্বর হয়, পেটে বিষক্রিয়া হয়। এই আগাছাটি পশু খেলে ঐ পশুর দুধ তিতো হয়ে থাকে। আর ঐ তিতো দুধ কোন মানুষ নিয়মিত পান করলে তার মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। আগাছাটি মানুষের শরিরে স্পর্শ করলে শরির লাল হয়ে ফুলে যায়, আক্রান্ত মানুষের জ্বর, মাথাব্যাথা, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্ট এমনকি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কৃষি জমিতে পার্থেনিয়াম যেকোনো ধরনের ফসলের প্রায় ৪০শতাংশ উৎপাদন কমিয়ে দিতে সক্ষম। এটি সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে আমের বাগান, আখ, কলা, হলুদ, করলা ও সিম ক্ষেতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উদ্ভিদের নাম পার্থেনিয়াম। এটি একটি আগাছার নাম। উদ্ভিদটি দেখতে আগাছার মতোই। গাছ ও গাছের ফুল দেখতে ধনিয়া গাছ ও তার ফুলের মতোই। চিকন সবুজ পাতার ফাঁকে ছোট ছোট সাদা ফুলে আকর্ষণীয় দেখায় গাছগুলো। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার খোলা জায়গা ও আবাদী জমির আইল ও পতিত জায়গায় জন্মাচ্ছে এই উদ্ভিদটি।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, পার্থেনিয়াম নামের উদ্ভিদটির আয়ুকাল মাত্র তিন থেকে চার মাস। এর মধ্যে তিনবার ফুল ও বীজ দেয় গাছটি। ফুল হয় সাধারণত গোলাকার, সাদা এবং পিচ্ছিল। বেড়ে ওঠে কোনো রকম যত্ন ছাড়াই। প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার বিশেষ সক্ষমতাও রয়েছে গাছটির।
স্থানীয় কোন মানুষের ধারনা নেই এই বিষাক্ত পার্থেনিয়াম উদ্ভিদের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। স্থানীয় কৃষক কার্তিক মরমু উক্ত গাছ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, এই আগাছা আগে তারা দেখেননি। ইদানিং কালে এই আগাছা তারা দেখছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মামুনূর রশিদ জানান, এই পার্থেনিয়াম আগাছাটি গত ১বছর ধরে পোরশা এলাকায় দেখা যাচ্ছে। ক্ষতিকর এই পার্থেনিয়াম আগাছাটি পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে বিভিন্ন ফসলের বীজ ও বাতাসের মাধ্যমে এসেছে। এই আগাছাটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি মানুষের এ্যাজমা স্বাসকষ্ট ও চুলকানিসহ নানান ধরনের জটিল রোগ দেখা দেয়। পশুর জন্য পেট ব্যাথা, বদহজমসহ নানান জটিল রোগ দেখা দেয়। মাটির গুনাগুন নষ্ট করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফসলের ফলন কনেক কমে যায়। যেভাবেই হোক এই বিষাক্ত আগাছাকে আগাছানাশক কীটনাশক ব্যবহার করে হোক বা অন্যান্য উপায়ে হোক এই গাছকে দমন করার পরামর্শ দেন তিনি। প্রয়োজনে এই বিষাক্ত আগাছা দমন করতে তিনি কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিতে বলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: নাজির আহমেদ বলেন, বিষাক্ত পার্থেনিয়াম শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছাতে পারে, যা থেকে হতে পারে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ থেকে শুরু করে মারণব্যাধি ক্যান্সারও। তাই সকলকে সতর্ক থাকতে বলেন তিনি।
কেকে/এআর